Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিকল ডেমু ট্রেন সচলের উদ্যোগ

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:১৩

ঢাকা: বছরের পর বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা ডেমু ট্রেনগুলো দেশীয় প্রযুক্তিতে মেরামতের কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলকভাবে একটা ডেমু ট্রেন মেরামতের কাজ করছেন তারা। এই কাজ চলতি মাসেই শেষ হবে। সফল হলে পড়ে থাকা বেশ কিছু ডেমু ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা যাবে।

ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট- ডেমু, এটি এক ধরনের ট্রেনের নাম। এই ট্রেনের দুই দিক দিয়ে দুইটি ইঞ্জিন, মাঝখানে বগি থাকে। একেকবার ১৪৯ জন যাত্রী আসনে বসতে পারেন, সেইসঙ্গে দেড়শ যাত্রী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে পারেন। ডেমু ট্রেন মূলত কম দূরত্বে যাত্রী পরিবহনের জন্য। যাত্রীদের সেবা আরও উন্নত, সহজ এবং দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যুক্ত হয় ২০টি ডেমু ট্রেন।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের কম দূরত্বে চলাচলের জন্য মূলত এই ডেমু ট্রেন ক্রয় করা হয়। চীনের থাংশান রেলওয়ে ভেহিকেল কোম্পানি লিমিটেড থেকে এই ডেমু আমদানিতে খরচ হয়েছিল ৬৪৫ কোটি টাকা। ট্রেনগুলোর মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০ বছর। সে হিসেবে ২০১৩ সালে তৈরি করা এসব ডেমু ট্রেনের চলার কথা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ৯ বছরেই অর্ধেকের বেশি ডেমু ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, নিম্মমানের কোচ, মেরামত কারখানা না থাকা, দূরত্ব সীমার চেয়ে বেশি চালানো, দেশের বাজারে যন্ত্রপাতির অপর্যাপ্ততাসহ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় আয়ুষ্কালের আগেই নষ্ট হয়ে গেছে এসব ট্রেন। অনেক ট্রেন আমদানির ৪-৫ বছরেই বিকল হতে শুরু করে। সাত বছরের মধ্যে ২০টি ডেমুর ১৩টিই বিকল গেছে।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, ট্রেনগুলো চীন থেকে আমদানি করতে খরচ হয়েছিল ৬৫৪ কোটি টাকা। এই ট্রেনে যাত্রী পরিবহন করে শুরুর ৫ বছরে রেল আয় করেছে ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা, খরচ করেছে ২৫ কোটি টাকা। এই ট্রেন কেনার পরিকল্পনাতেই ভুল ছিল, তা স্বীকার করলেন খোদ রেলমন্ত্রী নিজেই। এ বিষয়ে তার বক্তব্য, বাংলাদেশের জন্য ডেমু ট্রেন সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। এই ট্রেন আমদানির আগে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট যাচাই করা উচিত ছিল।

বিজ্ঞাপন

রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, নতুন করে এমন গাড়ি আর রেলওয়েতে যুক্ত হবে না। যে ডেমু ট্রেন বিকল, সেগুলো কতটা খারাপ অবস্থায় রয়েছে এবং কী কী যন্ত্রাংশ দরকার, সেগুলো পরীক্ষা-নিরিক্ষার কাজ চলমান। যেগুলো দেশে তৈরি যন্ত্রাংশ দিয়ে মেরামত করে চালানো যাবে, সেগুলো সচল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

জানা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে রেলওয়ের ওয়ার্কশপে ডেমু ট্রেনগুলো বছরের পর বছর ধরে পড়ে রয়েছে। এরমধ্য থেকেই একটা ডেমু ট্রেন নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দক্ষ প্রকৌশলীরা দীর্ঘসময় ধরে পরীক্ষা নিরিক্ষা করছেন এই ট্রেন দেশে তৈরি যন্ত্রাংশ দিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব কী না।

এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, কাজ একদম শেষ পর্যায়ে। তাদের লক্ষ্য রয়েছে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই ওই ট্রেন চালিয়ে দেখা।

তিনি বলেন, ডেমু যে প্রযুক্তি দিয়ে বানিয়েছে, তা বাংলাদেশকে জিম্মি করে ফেলেছে। ডেমু তৈরি করা কোম্পানি চীনের থাংশান রেলওয়ে ভেহিকেল কোম্পানি লিমিটেড ডেমুগুলো তৈরিতে এমন প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ এমনভাবে ব্যবহার করেছে যেন যেকোনো সময় নষ্ট হলে ওই কোম্পানির কাছ থেকেই চড়া দামে যন্ত্রাংশ কিনতে হয়।

উল্লেখ্য, ডেমু ট্রেনগুলো ঢাকা- টঙ্গী, ঢাকা- জয়দেবপুর, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ, সিলেট-আখাউড়া, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা, নোয়াখালী- লাকসাম, লাকসাম-চাঁদপুর, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, পাবর্তীপুর-লালমনিরহাট, পাবর্তীপুর-পঞ্চগড় রুটে চলাচল করতো। ট্রেনগুলো মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের আশপাশে কম দূরত্বে ২০ কিলোমিটার এরমধ্যে চলাচলের জন্য কেনা হয়েছিল। কিন্তু অন্য রুটগুলোতে দূরত্ব চারগুণেরও বেশি ছিল, যে কারনে ট্রেনগুলো বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি।

সারাবাংলা/জেআর/এএম

ডেমু ট্রেন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর