ঢাকা: নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি, দিনের ভোট রাতে হওয়া এ সব বিষয়ে জানতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ‘রাতে ভোট হওয়ার খবর সত্য নয়। দিনের ভোট রাতে হলে প্রার্থীরা আদালতে যেত। কিন্তু কোনো প্রার্থী আদালতে যাননি। এতেই প্রমাণিত হয় বিষয়টি অসত্য।’
দায়িত্ব পালনকালে নিজের কোনো ব্যর্থতা নেই বলে এ সময় দাবি করেন বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশন কে এম নুরুল হুদা।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) গত পাঁচ বছরের সফলতা তুলে ধরতে ইসি সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সবগুলো নির্বাচন শেষ করা। আমরা নির্বাচনগুলো শেষ করতে পেরেছি, এটি বড় সফলতা। ওই সব নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পেরেছে।’
নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি, দিনের ভোট রাতে হওয়া এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাতে ভোট হওয়ার খবর সত্য নয়। দিনের ভোট রাতে হলে প্রার্থীরা আদালতে যেত। কিন্তু কোনো প্রার্থী আদালতে যাননি। এতেই প্রমাণিত হয় বিষয়টি অসত্য।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে একটি কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এ কর্মপরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর স্টেকহোল্ডার-নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট নাগরিক, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ও সিনিয়র জার্নালিস্ট, এনজিও প্রতিনিধি নির্বাচন পর্যবেক্ষক, বিদেশি কূটনীতিক ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। তাদের সুনির্দিষ্ট মতামত, প্রস্তাব ও পরামর্শ আমাদের সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সব নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করেছে এবং আমাদের সার্বিক কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করেছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব আইন যুগোপযোগী করে সংস্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ জনগণ যাতে সহজেই আইনসমূহ বুঝতে পারেন, সে জন্য আইনসমূহ বাংলায় রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিভিন্ন আইন সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) অনুবাদ করে নির্ভরযোগ্য বাংলা পঠন প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ আইন প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ বাংলায় নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।’
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা নিয়ে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছরে দুবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ে অফিসসমূহের মাধ্যমে সারাবছরই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। বর্তমানে (১৯ জানুয়ারি ২০২২) দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৩১ লাখ ২৩ হাজার ১৭৫ জন। বর্তমান কমিশন হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। প্রথমবারেই ৩৬০ তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিক ভোটার হন ‘
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিনটি রাজনৈতিক দলকে নতুন করে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের বিধিবিধান যথাযথ প্রতিপালন না করায় তিনটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।’
এ ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে জিআইএস পদ্ধতি ব্যবহার করে জাতীয় সংসদের ২৫টি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো ছিটমহলগুলোকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেন। পাঁচ বছর মেয়াদ আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে।
সিইসি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি পরিপূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য। কারও কথায় নয়, আইনের শাসনের মধ্যে থাকার চেষ্টা করেছি।’
সব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। কারণ সবাই তো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ বলে দেয় আমরা তাদের কাছে সমান গ্রহণযোগ্য হতে পারিনি।’