বসন্তের বাতাস ভালবাসার রঙ ছড়িয়েছে চবি ক্যাম্পাসে
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২০:৪১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রভাব এখনো কাটেনি। সেই প্রভাবেই এখনো বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বসন্তের আগমন এই মহামারির কালে হলেও দমানো যায়নি তারুণ্যকে। পহেলা ফাল্গুনের সেই বাসন্তি রঙের সঙ্গে ভালোবাসা দিবসের যে রঙের মিশেল, এই মহামারি ছাপিয়েও সেই রঙের ছোঁয়ায় সেজে উঠল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস। শীতের শেষে বসন্তের ছোঁয়ায় যেমন জেগে ওঠে প্রকৃতি, তেমনই বন্ধ ক্যাম্পাসও জেগে উঠল যেন তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে।
বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা চবি ক্যাম্পাসও ঋতুর পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে হাজির হয় নতুন চেহারা নিয়ে। শীতের শুষ্কতা আর মৌনতা ভেঙে প্রকৃতিকে যখন লাল-সবুজে সাজাতে ব্যস্ত বসন্ত, সেই নতুন পাতার উপস্থিতি আর পাখির কলতানে চবি ক্যাম্পাসও সেজেছে নতুন রঙে। একদিকে কোকিলের ডাক, অন্যদিকে ফুলে ফুলে প্রজাপতির ওড়াউড়ি— তাকালেই বোঝা যায় বসন্তের উপস্থিতি।
বঙ্গাব্দ বর্ষপঞ্জির সংস্কারের পর থেকেই ঋতুরাজ বসন্তের শুরুর দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি পড়ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দুইটি দিনকে একসঙ্গে বরণ করে নিতেই সোমবার চবি ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছিল মুখর। জিরো পয়েন্ট, শহিদ মিনার, জয় বাংলা ভাস্কর্য, মুক্তমঞ্চ, লেডিস ঝুপড়ি, কলা ঝুপড়ি, ফরেস্ট্রি রোডসহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রতিটি চত্বরেই ছিল শিক্ষার্থীদের পদচারণা। কমলা-হলুদ-লাল রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবিতে ক্যাম্পাস ছিল বর্ণিল।
প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নাচ-গান, নাটকসহ নানা আয়োজনে বসন্ত বরণ আয়োজন করে থাকে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সেসব আয়োজন এবারেও স্থগিত রাখা হয়েছে। ফলে আনুষ্ঠানিকতার আবরণ ছাড়াই নিজেদের মতো করে ঋতুরাজ বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসকে বরণ করে নিয়েছেন।
বসন্ত বরণ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অব ডিবেটের (সিইউএসডি) আয়োজনে অবশ্য ছিল ‘রম্য বিতর্ক’। অন্যদিকে ‘সিংগেল ঐক্য পরিষদ’ গঠন করে ‘লুঙ্গি, শাড়ি সমাবেশ ও বসন্ত বরণ’ উৎসব করেছেন। এসময় তাদের ‘বসন্তের বাতাসে, লুঙ্গি উড়বে আকাশে’, ‘তুমি কে আমি কে, সিংগেল সিংগেল’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।
সিইউএসডি’র বাপ্পারাজ হাওলাদার বলেন, বসন্তের আগমনে আমাদের মন নিশ্চিতভাবেই রঙিন হয়ে ওঠে। এই দিনটি আবার ভালোবাসা দিবসও। কেউ কেউ মনে করে, ভালোবাসা শুধু প্রেমিকের প্রতি প্রেমিকার কিংবা প্রেমিকার প্রতি প্রেমিকের। কিন্তু আমরা মনে করি, ভালোবাসা সবার জন্য। বিশেষ করে বসন্ত সার্বজনীন। সবাই যেন প্রকৃতির দারুণ এই সময়টি প্রিয়জনদের নিয়ে উপভোগ করতে পারে, এটিই প্রত্যাশা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের রুদ্র ফারাবী বলেন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন আজ। এবার বাঙালি প্রাণ যখন বসন্ত বরণ করছে, তখন সম্ভাবনার এক নতুন বাংলাদেশ দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব বাঙালি। এ স্বপ্নকে চেতনায় ধারণ করেই প্রকৃতিতে লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায়— ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক/আজ বসন্ত’।
তিনি বলেন, গাছে গাছে ফুটেছে রক্তশিমুল-পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম। বসন্ত বাতাস দোলা দিচ্ছে প্রতিটি মনে-প্রাণে। সেই প্রাণ আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গাইবে— ‘আহা আজি এ বসন্তে/ এত ফুল ফোটে/ এত বাঁশি বাজে/ এত পাখি গায়’। দখিনা হাওয়া, মৌমাছির গুঞ্জরণ, কচি-কিশলয় আর কোকিলের কুহুতানে জেগে ওঠার দিন আজ।
সারাবাংলা/সিসি/টিআর