Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কৃষক আজিজুরের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া মামলা’ পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:২১

ফাইল ছবি: হাইকোর্ট

ঢাকা: সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের ফিরিঙ্গীকান্দা গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ভুয়া পরোয়ানা ও মামলার বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

রুলে ভুক্তভোগী আজিজুর রহমানকে ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, অপরাধ তদন্ত বিভাগ ও বিশেষ শাখার প্রধান (অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক), পিবিআইয়ের উপ মহাপরিদর্শক, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার, ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার, মাদারীপুর, জামালপুর, গাজীপুরের পুলিশ সুপার, জয়দেবপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ ইউনুস আলী রবি।

পরে আইনজীবী সৈয়দ ইউনুস আলী রবি জানান, ভুয়া মামলা ও পরোয়ানায় বিষয়ে তদন্ত করে পিবিআইকে ৬০ দিনের প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রশ্নের রুল জারি করেছেন আদালত।

আইনজীবী আরও জানান, গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার একটি মাদক মামলায় সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের ফিরিঙ্গীকান্দা গ্রামের গেদু মিয়ার ছেলে কৃষক আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল আজিজকে প্রথমে পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই মামলায় আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। এরপর তার বিরুদ্ধে একে একে আরও ৭টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় আজিজুর রহমান ১০০ দিন জেল খাটেন।

বিজ্ঞাপন

আইনজীবী জানান, গাজিপুরের জয়দেবপুর থানায় ২০১৭ সালের ২০ মার্চ আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় ২০১৮ সালের ৬ মার্চ তাকে গ্রেফতার করে সাভার থানা পুলিশ। পরে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করে। শুনানি শেষে আদালত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেন। কয়েক দিন সেখানে থাকার পর আবদুল আজিজকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এর তিন দিন পর সেখান থেকে পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারে। এভাবে দেশের বিভিন্ন কারাগারে ১০০ দিন কারাভোগ করার পর ২০১৮ সালের ১৩ মে তার জামিন হয়। পরে ১২ জুন তিনি মুক্তি পান।

মামলা বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুর থানার পুবাইল তালুটিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ৪০০টি ইয়াবা বড়িসহ রিপা ও আমেনা নামের দুই মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আজিজসহ নয়জন পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করে। শুনানি শেষে আদালত তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেন। কয়েক দিন সেখানে থাকার পর তাকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এর তিন দিন পর সেখান থেকে পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারে।

কাশিমপুর কারগারে থাকা অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি ও চান্দগাঁও থানার চারটি মামলায়, রাজধানীর মিরপুর থানার দুইটি মামলায়, জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার একটি মামলায় ও মাদারীপুর সদর থানার একটি মামলায় পরোয়ানার মাধ্যমে গ্রেফতার দেখানো হয়। এসব মামলায় তাকে চট্টগ্রাম কারাগার, মাদারীপুর কারাগার ও জামালপুর কারাগারে থাকতে হয়। সর্বশেষ তিনি ছিলেন কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। এসব মামলায় আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, অর্থ পাচার, ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম দায়রা জজ তৃতীয় আদালত গত বছর ২৯ মে এক আদেশে বলেন, আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল আজিজ নামে কোনো আসামি নেই। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজিজুরের অন্তর্বর্তীকালীন হাজতি পরোয়ানার ফটোকপিতে শুধু দায়রা নম্বর ছাড়া আর কোনো কিছুর মিল নেই এবং আদালত (চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম দায়রা জজ তৃতীয় আদালত) থেকে তার নামে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়নি। অন্য কোনো মামলায় আটকাদেশ না থাকলে তাকে (আবদুল আজিজ) মুক্তির নির্দেশ দেন আদালত। এভাবে ৭টি মামলাতেই আবদুল আজিজের মুক্তির আদেশ হয়। তবে গাজীপুরের জয়দেবপুরে দায়ের হওয়া মাদক মামলাটি চলমান থাকায় এখনো তাকে নিয়মিত কোর্টে হাজিরা দিয়ে যেতে হচ্ছে। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সঙ্গে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে এসব ভুয়া মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে আমার দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। এসব কারণে ভুয়া মামলা করা হয়ে থাকতে পারে। মাদকের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান অনেকেই ভালোভাবে নেয় না। আমাকে যারা হয়রানি করছে তাদের খুঁজে বের করা এবং এসব অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে শান্তি নিশ্চিতের দাবি করছি।’

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

আজিজুর রহমান ভুয়া মামলা মামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর