এখনো নির্মাণ হলো না দেশের ‘প্রথম’ শহিদ মিনার
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:০৭
রাজশাহী: ঢাকায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বের করা মিছিলে গুলি চলার খবর রাজশাহী এসেছিল বিকালে। মেইল ট্রেনে আসা এক ব্যক্তি সেই খবর এনেছিলেন। তখন রাজশাহীতেও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন তুঙ্গে। ঢাকায় রফিক, সালাম, বরকতদের শহিদ হওয়ার খবর রাজশাহী এলে রাতেই ইট-কাঁদামাটির গাঁথুনি দিয়ে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ।
রাজশাহীর ভাষা সৈনিকেরা দাবি করে আসছেন, রাজশাহী কলেজের মুসলিম হোস্টেলে নির্মাণ করা ওই স্মৃতিস্তম্ভটিই দেশের প্রথম শহিদ মিনার। যদিও ওই স্মৃতিস্তম্ভটি পরবর্তী সময়ে তৎকালীন সরকার ভেঙে ফেলে। এরপর ২০০৯ সালে ওই স্থানে আবার শ্রদ্ধাস্মারক হিসেবে আরেকটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। তবে ওই স্থানটিতে একটি শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য ভাষা সৈনিকেরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সেই কাজ শুরু হলেও পরে থেমে গেছে।
প্রায় চার বছর আগে নতুন শহিদ মিনারটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। তারপর দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু আজও সেই শহিদ মিনারের কাজ শেষ হয়নি। নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাবেরা এন্টারপ্রাইজের জুলফিকার হায়দার জানিয়েছেন, শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য তারা মাটির নিচে ২২টি পাইলিং করেছেন। বিল হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু সেই বিল তারা পাননি। তাই কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শহিদ মিনারের জন্য রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা তার অনূকুলে বরাদ্দ করা অর্থ থেকে ৫০ লাখ টাকা রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে দিয়েছিলেন। তারপরই টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচন করে কাজ শুরু হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন কাজ শুরুর পর প্রথম কিস্তিরই টাকা পরিশোধ করেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরনো স্মৃতিস্তম্ভটির পাশে নতুন শহিদ মিনারের জন্য পাইলিং করা হয়েছে। কিন্তু কাজের এই অংশটি মাটির নিচেই আছে। রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান বলেন, নতুন শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য ডাইনিং, রাস্তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তারপর কাজ শুরুও হয়। কিন্তু কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আর কাজ শেষ হয়নি। কেন কাজ শেষ হয়নি তা সিটি করপোরেশন ভাল বলতে পারবে।
সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা চিকিৎসার জন্য এখন দিল্লিতে অবস্থান করছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতেই প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণ হয়েছিল। সেটিকে স্থায়ী রূপ দিতে আমি সিটি করপোরেশনকে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলাম। কিন্তু কেন কাজ শেষ হয়নি তা আমি বলতে পারব না।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, ‘ওই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী অবসরে চলে গেছেন। কেন বিল পরিশোধ করা হয়নি তা তিনি জানেন না। তবে কাজটা যেহেতু হয়নি, তাই সেটিকে নতুন আরেকটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। কয়েকমাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’
রাজশাহীর ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় যারা শহিদ হয়েছিলেন তাদের নামকে অমর করে রাখার জন্য রাতেই আমরা রাজশাহী কলেজের তখনকার নিউ হোস্টেলে একটা স্মৃতিস্তম্ভ করেছিলাম। আশপাশে থেকে ইট-পাটকেল সংগ্রহ করে রাতেই কাঁদামাটির গাঁথুনি দিয়ে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করি। স্মৃতিস্তম্ভে একটা কাগজের পোস্টার লাগিয়ে তাতে লিখে দিই- ‘ভয় নাই ওরে ভয় নাই/নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে সেখানে স্থায়ী শহিদ মিনার নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু কাজটা শেষ না হওয়া দুঃখজনক। দ্রুত যেন কাজটা শেষ করা হয় এবং এটিকে দেশের প্রথম শহিদ মিনার হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়।’
সারাবাংলা/এএম