সরকারি হওয়ার অপেক্ষায় থাকা কলেজে এ বছরই শিক্ষক নিয়োগ
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:১৪
ঢাকা: সরকারিকরণের অপেক্ষায় থাকা ৩০৩টি কলেজে এ বছর থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। কোন কোন কলেজে অবসর ও মৃত্যুজনিত কারণে শিক্ষক সংকট রয়েছে, তার খোঁজ নিয়ে কলেজগুলোতে নতুন শিক্ষক দেওয়া হবে। একইসঙ্গে এই বছরের মধ্যেই কলেজ সরকারিকরণের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রী সারাবাংলা‘কে বলেন, ‘অনেক কলেজে শিক্ষক সংকট রয়েছে আমাদের এমন অভিযোগ থাকলেও প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত ছিল না। মহামারিতেও অনেক শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেছেন, আমরা খোঁজ নিচ্ছি। সেসব কলেজে নতুন শিক্ষক দেওয়া হবে। কোথাও শিক্ষক সংকট থাকবে না।’
নির্বাচিত বেসরকারি কলেজগুলোকে সরকারি করতে ২০১৮ সালে জিও বা সরকারি আদেশ জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর বিভিন্ন ধাপে যাচাইবাছাই শেষে কলেজ সরকারিকরণের ফাইল এখন আটকে আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এ বিষয়ে মন্ত্রী শিক্ষকদের ‘আশা ধরে রাখা’র পরামর্শ দেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এই বছরেই সব কলেজ সরকারি হওয়ার কাজ শেষ হবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সরকারি করা কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের কাজে অনেক কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সব কাগজপত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। সেখান থেকে তা আবার শিক্ষায় ফিরে আসে। সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। অনেক কাগজপত্রে সই করতে হয়।’
দীপু মনি সরকারিকরণের কাজটি দেরি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘আসলে শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের যে প্রক্রিয়া তা কিছুটা জটিল। এ প্রক্রিয়াগত কারণেই সরকারি হওয়া কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের কাজে কিছুটা সময় লাগছে। আমরা এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যা যা করা প্রয়োজন তা করার চেষ্টা করছি। এ বছরই সরকারি হওয়া কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের কাজ শেষ হবে।’
৩০৩ কলেজের সরকারিকরণ আটকে আছে নথি যাচাইয়ে
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সংসদেও, স্কুল-কলেজ সরকারিকরণের প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলেজ সরকারিকরণের কাজ গতবছরও যতটুকু ছিল এখনও তেমনই পড়ে আছে। এ বিষয়ে দায়িত্বরত কোন কর্মকর্তা কথাও বলতে চাচ্ছেন না। ‘কাজ চলছে’ বলেই ফোন রাখছেন তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস (কলেজ ১), উপসচিব ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্র (সরকারি কলেজ ২) বলেছেন, ‘এ বছরে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারিকরণের কাজ এ বছরেও শেষ হবে না। কারণ অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরির কাগজে ঝামেলা রয়েছে। এসব ঝামেলা সমাধানে শিক্ষকরা আগ্রহী হলেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যথেষ্ট আগ্রহী না। তারা কাজ করছেন ঢিমেতালে। আর একারণেই কাজটি এ বছরেও শেষ করা সম্ভব হবে না।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ফাইলই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের টেবিলে গিয়ে ফিরে আসছে। তবে কলেজ সরকারিকরণের জিও আদেশের পর যেসব শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেছেন বা মারা গেছেন তাদের সবাই অবসর ও বেতন-ভাতায় সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’
প্রসঙ্গত, সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, এই কলেজগুলো সরকারি হওয়ার পর এই কয় বছরে বছরে ২ হাজারেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেছেন।
৩ শতাধিক কলেজে শিক্ষক সংকটে কমছে শিক্ষার মান
উল্লেখ্য, দেশের যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি কলেজ ছিল না, সেগুলোতে একটি করে বেসরকারি কলেজকে সরকারি করা হয়েছে। এই কলেজগুলো সরকারিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। এজন্য ওই বছরের ৩০ জুন কলেজগুলোতে নতুন করে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পরে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট দেশের ২৭১টি বেসরকারি কলেজকে সরকারি করে আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে-পরে আরও ৩২টি কলেজ জাতীয়করণ হয়। সব মিলিয়ে সরকারি হওয়া কলেজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০৩টি।
সারাবাংলা/টিএস/এমও