ঘরে ঘরে শব্দ দূষণের রোগী, নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২০:৪৫
ঢাকা: শব্দ দূষণের কারণে মাথাব্যথা, কানে কম শোনাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে মানুষ। বিশেষ করে হৃদরোগে আক্রান্ত যারা তারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন। তাই এর প্রতিকার করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা উঠে আসে। পরিবেশ অধিদফতরের অধীনে ‘শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পে’র আওতায় বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সহযোগিতায় ছিল ইকিউএমএস কনসাল্টিং লিমিটেড এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবেশ অধিদফতর শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে দেশের প্রতিটি জেলা শহরে শব্দ মাত্রা পরিমাপের বিষয়ে সমীক্ষা ও সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ফরিদপুরে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তারা রাত ও দিনের শব্দ দূষণের মাত্রার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে সবাইকে সচেতন করার এবং শব্দ দূষণকারীকে পরিবেশ আইন প্রয়োগ করে শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ডা. মো. শাহ আলম ভদ্র ঘরে ঘরে শব্দ দূষণের রোগী দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ আইন প্রয়োগের আহ্বান জানান। এটি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এর ভয়াবহতা বেড়ে যাবে ও মানুষকে অনেক বেশি ভোগান্তি পোহাতে হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
জাহিদ রিপন বলেন, শব্দ দূষণের কারণে আমার ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া মেধাবী মেয়ে এখন শয্যাশায়ী। এর প্রভাবে আমার পুরো পরিবার তছনছ হয়ে গেছে। শব্দের মাত্রা বেশি হলে তা পুলিশের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে হাইড্রলিক হর্ন, অযথা হর্ন বাজানো ও আতশবাজি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধের দাবি জানান।
মোহাম্মদ মাহমুদ আল সিদ্দিকী বলেন, গাড়িচালকদের সচেতন করতে হবে। উচ্চ শব্দে গান-বাজনা বন্ধ করতে হবে। ব্যস্ত এলাকাগুলোর শব্দ দূষণের উৎস বের করে ওইসব এলাকায় জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করতে হবে।
দিবাকর গোস্বামী বলেন, শব্দ ভালো, তবে দূষণ ভালো নয়। দেশে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে কিন্তু শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে করতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯-এ কল করে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
নাঈমুর রহমান মৃধা বলেন, পরিবেশ আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। শব্দ দূষণের মাধ্যমে বর্তমানে যে সামাজিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে তার আশু প্রতিকার জরুরি।
ফরিদপুর জেলা পরিবেশ কার্যালয়ের উপপরিচালক এ এইচ এম রাশেদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপক কুমার রায়। বক্তব্য রাখেন ফরিদপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার শাহ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা, ফরিদপুর জেলার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আসাদুর রহমানসহ অন্যরা। অনুষ্ঠানে প্রকল্প সম্পর্কে সার্বিক ধারণা দেন ক্যাপসের গবেষণা পরিচালক ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রভাষক আবদুল্লাহ আল নাঈম।
প্রকল্পের জরিপ কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তার নেতৃত্বে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পরিচালিত এই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, স্কুল ও কলেজ শিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আলাদাভাবে মতবিনিময় করা হয়।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর