Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কংগ্রেসের জন্য প্রস্তুত সিপিবি, রিপোর্টের খসড়া চূড়ান্ত

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:৩৫

ঢাকা: কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের জন্য প্রস্তুত দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে চলছে কংগ্রেসের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মঞ্চ ও মঞ্চের বাইরে সাজসজ্জার কাজে অংশ নিয়েছে দলীয় শতাধিক কর্মী। ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দলটির দীর্ঘ সময়ের লড়াই-সংগ্রামের চিত্র। তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ফেস্টুন, স্লোগান সম্বলিত বোর্ড, ব্যানার।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এরই মধ্যে কংগ্রেসে উত্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে সভাপতির ভাষণ। কংগ্রেসে প্রবীণ-নবীনদের মিলনমেলায় অংশ নিতে দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কমিউনিস্ট পার্টি ডেলিগেটরা ঢাকায় এসে উপস্থিত হয়েছেন। এ সংখ্যা প্রায় পাঁচশ। আগামীকাল শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) শুরু হবে সিপিবির এই কংগ্রেস। টানা চার দিন ধরে চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

সিপিবি’র একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে কংগ্রেসে উত্থাপনের জন্য নতুন কমিটির একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। নতুন কমিটির প্রস্তাবনায় বর্তমান কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন ১৪ জন। প্রস্তাবনা অনুযায়ী সিপিবি’তে এবার নতুন নেতৃত্বে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

সিপিবি’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। সে অনুযায়ী বর্তমান সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের পক্ষে আর সিপিবি’র নেতৃত্বে থাকার সুযোগ নেই। তবে গঠনতন্ত্রের এই ধারাটি সংশোধনের চেষ্টা চলছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্রগুলো বলছে, দলীয় নেতৃত্ব নির্ধারণ বিষয় এই ধারা সংশোধন নিয়ে অবশ্য দুইটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে পার্টি। একটি পক্ষ কোনো ব্যক্তিকে দুই মেয়াদের বেশি সময়ও নেতৃত্বে রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কংগ্রেসে এই পক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে পারলে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের জন্য ফের সিপিবি’র নেতৃত্বে থাকার পথ সুগম হবে।

অন্যদিকে, বিপরীত পক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে সেলিমের পক্ষে আর সিপিবির নেতৃত্বে থাকা সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্ব হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম এবং ঢাবি অধ্যাপক এম এম আকাশের নাম রয়েছে আলোচনায়। অন্যদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাজ্জাদ জহির চন্দন, আবদুল্লাহ আল কাফি (কাফি রতন) এবং মিহির ঘোষের নাম রয়েছে আলোচনায়।

কংগ্রেসের ঠিক আগ মুহূর্তে পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে মুখ খুলতে চাননি সিপিবি’র কোনো নেতাই। জানতে চাইলে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পার্টি পরিচালিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই সবকিছু হবে। আর পার্টির সর্বোচ্চ ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে। কংগ্রেস যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটিই হবে।

আরও পড়ুন- পুরোদমে চলছে কংগ্রেসের প্রস্তুতি, নতুন নেতৃত্ব আসছে সিপিবিতে

যা রয়েছে সিপিবির রিপোর্টে

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় কমিটি রিপোর্টের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর ওপর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করবেন কংগ্রেসের ডেলিগেটরা। কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টে বাম গণতান্ত্রিক জোট সম্পর্কে বলা হয়েছে, সরকারের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক নীতি দর্শনকে মৌলিকভাবে বিরোধিতা করে দেশের সেরা রাজনৈতিক শক্তি এখন বেশ দুর্বল। এই দুর্বলতা রাজনীতির অঙ্গনে এক ধরনের শূন্যতা ও ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে রেখেছে। এই শূন্যতা সহসা পূরণ করা কষ্টকর। বাম গণতান্ত্রিক জোট সেক্ষেত্রে সক্রিয় থাকলেও তার কর্মকাণ্ড প্রধানত বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

সিপিবি’র এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে উঠেছিল। প্রায় এক দশক ধরে এই ফ্রন্টের তৎপরতা জনগণের ভেতরের আশার জন্ম দিয়েছিল। বামফ্রন্টের উদ্যোগেই ১৯৯৮ সালে গড়ে উঠেছিল বৃহত্তর ১১ দলীয় জোট। কিন্তু ২০০৬ সালে বামফ্রন্ট ও সেইসঙ্গে ১১ দলীয় জোট ভেঙে যায়। ওই সময় অধিকাংশ দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটে যুক্ত হয়। এর ধারাবাহিকতায় পরে তারা মহাজোটের শরিক হয়ে পড়ে।

সিপিবি বলছে, এই পটভূমিতে ২০১০ সালে বুর্জোয়া রাজনীতির বাইরে দ্বিতীয় বৃহত্তর বিকল্প গড়ে তোলার কর্তব্য এগিয়ে নিতে সিপিবি-বাসদ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বামপন্থি ধারায় গণসংগ্রাম ও শ্রেণিসংগ্রাম এগিয়ে নিতে সচেষ্ট হয়। বিভিন্ন বামপন্থি দল ও শক্তির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আলোচনা ও মতবনিময় চালানো হয়। একসময় পৃথকভাবে সক্রিয় গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সঙ্গে নানা ইস্যুতে যুগপৎভাবে রাজপথে কর্মসূচি পলিত হতে থাকে। এই চলমান প্রক্রিয়া একপর্যায়ে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা একইসঙ্গে দুই ব্যানারে ইস্যুভিত্তিক সভা-সমাবেশ করতে থাকে। পরে ২০০৮ সালের ১৬ জুলাই পাঁচ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট আত্মপ্রকাশ করে। এই জোট  তিনটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সভা-সমাবেশ ও মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে রাজপথে সক্রিয় থাকছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিপিবি’র রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়— একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক প্রতীকে না হলেও সিপিবি’র ৭১টিসহ বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থীরা ১৩৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনের পর বাম গণতান্ত্রিক জোট তিনটি অন্তঃসম্পর্কিত স্লোগানকে ভিত্তি করে সংগ্রাম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বাম জোটের কোনো কোনো শরিক দলের মধ্যে একক প্রার্থী দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে, সরকারের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে গঠিত ঐক্যজোটেও অংশ নেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এ পরিস্থিতিতে ঐক্য ও সংগ্রামের কৌশল নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটকে শক্তিশালী করার জন্য সিপিবি পদক্ষেপ নিয়েছে।

কেন্দ্রীয় কমিটির এই প্রতিবেদনে তরুণ কর্মীদের বিষয়ে বলা হয়েছে, সর্বক্ষণিক কর্মীরা পার্টির সম্পদ। বর্তমানে পার্টির ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় এ ধরনের কর্মীর প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে গেছে। কিন্তু ভোগবাদী প্রবণতা এবং একটি অংশের আত্মপ্রতিষ্ঠাকেন্দ্রিক জীবনযাপন ও বুর্জোয়াদের প্রলোভন তরুণদের পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে যুক্ত হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া পার্টি সার্বক্ষণিক কর্মী হওয়া নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব পার্টিতে গড়ে উঠেছিল। নবম কংগ্রেসের পর সেই মনোভাব কাটতে শুরু করে। কিন্তু এখনো সার্বক্ষণিক কর্মীদের সম্পর্কে নানা অপপ্রচার অব্যাহত রয়েছে। কিছু অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তিও রয়েছে। তা কাটাতে নেতিবাচক প্রচারণা কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

রিপোর্টে বলা হয়, পার্টি থেকে সার্বক্ষণিক কর্মীদের যে ভাতা দেওয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। এ ক্ষেত্রে তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রেও জেলাগুলোর প্রচেষ্টায় ঘাটতি রয়েছে।

রিপোর্টে আরও বলা হয়, পার্টির সব স্তরেই নানা মাত্রায় ঢিলেঢালা ভাব ও কাজে ফাঁকি দেওয়া, কাজ না করে নেতা হওয়া, নিজেকে জাহির করা— এমন নানা ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি-ঘাটতি এবং বুর্জোয়া ও পেটিবুর্জোয়া অভ্যাস বিরাজ করছে। এই অভ্যাস দূর করতে হবে। তা না করতে পারলে সবসময় চাহিদা অনুযায়ী বিপ্লবী ধারায় একটি শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। পার্টির ভেতরে যেকোনো ধরনের বুর্জোয়া ও পেটি বুর্জোয়া অভ্যাস ও প্রবণতার বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম জারি রাখতে হবে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

১২তম কংগ্রেস কেন্দ্রীয় কংগ্রেস টপ নিউজ দ্বাদশ কংগ্রেস সিপিবি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর