বিজ্ঞাপন

পুরোদমে চলছে কংগ্রেসের প্রস্তুতি, নতুন নেতৃত্ব আসছে সিপিবিতে

February 20, 2022 | 9:00 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিকল্প শক্তি সংগ্রহের জন্য ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কংগ্রেস আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এই কংগ্রেসের মাধ্যমেই দেশের বাম ঘরানার প্রবীণ এই রাজনৈতিক দলটির নেতৃত্বে আসতে যাচ্ছে পরিবর্তন। সেক্ষেত্রে জোর আলোচনায় রয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম এম আকাশ।

বিজ্ঞাপন

আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মহানগর নাট্যমঞ্চে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির এই কংগ্রেস হবে। কংগ্রেসের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘দুঃশাসন হটাও, ব্যবস্থা বদলাও, বিকল্প গড়ো’।

দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সিপিবি’র সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এবার আর তিনি সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না। তবে গুঞ্জন ছিল, গঠনতন্ত্র সংশোধন করে হলেও ফের সভাপতি পদে বহাল থাকবেন সেলিম। গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন সংগ্রহের জন্য কাজ চলছিল বলেও জানা গিয়েছিল। তবে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম নিজেই দলীয় একাধিক ফোরামে জানিয়েছেন, তিনি আর সভাপতি পদে থাতে চান না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে থাকবেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে। গঠনতন্ত্রের সংশোধনী নিয়ে প্রস্তাব থাকলে সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে কংগ্রেসে ঠিক করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনার সূত্র ধরে মুজাহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি আবারও সভাপতি পদে আসবেন কি না। সরাসরি জবাব না দিলেও তিনি বলেন, ‘দলের নেতৃত্বে কে আসবে, এটি সবসময় কংগ্রেস নির্ধারণ করে থাকে। এবারও কংগ্রেসই নির্ধারণ করবে দলের নেতৃত্ব কী হবে।’

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সভাপতি না থাকলে নতুন নেতৃত্ব হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলমের নাম। দীর্ঘ দিনের পোড় খাওয়া এই বাম নেতাকে সিপিবিতে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের যোগ্য উত্তরসূরী মনে করছেন অনেকেই। তবে একইসঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম এম আকাশের নামও। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ ছাড়লে সিপিবি পদে আসতে কোনো বাধা থাকছে না তার জন্য।

এদিকে, দলীয় সূত্রগুলো বলছে, কংগ্রেস থেকে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক পদে সাজ্জাদ জহির চন্দন, রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং কাফি রতনের নাম রয়েছে জোর আলোচনায়। তাদের তিন জনের মধ্যে কার পাল্লা ভারী— সে বিষয়ে অবশ্য কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা এবং জেলা পর্যায়ের নেতারাও বলছেন, বিজ্ঞ এবং নব্বইয়ের দশকে পার্টির দুর্দিনে যারা শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছেন, তাদের মধ্য থেকে কাউকেই সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা উচিত।

বিজ্ঞাপন

দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নতুন নেতৃত্বের একটি খসড়া প্রণয়ন করা হবে। ওই খসড়া উত্থাপন করা হবে ২৮ ফেব্রুয়ারির কংগ্রেসে। খসড়াটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হলেও নেতৃত্ব প্রসঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কংগ্রেসই।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস সফল করতে ৬৫টি জেলা, ৩০০টি উপজেলা ও এক হাজার গ্রাম/ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন করা হয়েছে। এসব সম্মেলন থেকে নতুন নেতৃত্ব এবং বর্তমান ‘দুঃশাসনে’র বিরুদ্ধে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ইস্পাত কঠিন লড়াইয়ের দাবি উঠেছে।

সিপিবি’র কংগ্রেসে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে চার হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী উপস্থিত হবেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে এবারের কংগ্রেসে বিদেশি অর্থাৎ দেশের বাইরের কোনো ডেলিগেটকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে নেপাল, ভুটান, ভারত, জার্মানিসহ শতাধিক দেশের কমিউনিস্ট নেতারা ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে কংগ্রেসে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন। অনেকে লিখিতবার্তা পাঠিয়েও শুভেচ্ছা জানাবেন। আর জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্যান্য দলের রাজনৈতিক নেতাদের কংগ্রেসে উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে সিপিবি। কংগ্রেসের উদ্বোধনী সেশনে এসব নেতাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হবে।

কংগ্রেসের প্রস্তুতিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে রুহিন হোসেন প্রিন্স সারাবাংলাকে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে বিদেশি কোনো অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো সম্ভব হয়নি। তবে আমরা দেশের বিভিন্ন রাজনেতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আর কমিউনিস্ট পার্টির এবারের কংগ্রেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ বিকল্প শক্তি সংগ্রহের জন্য শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য।

বিজ্ঞাপন

কংগ্রেসের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরে আব্দুল্লাহ কাফি রতন সারাবাংলাকে বলেন, এই সরকারের অধীনে জনগণের ভোটাধিকার নিরাপদ নয়। আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা আমাদের লক্ষ্য। শ্রমিক মেহনতী মনুষের ন্যায্য অধিকার আদায় আমাদের লক্ষ্য। তাই ইস্পাতকঠিন লড়াই করে এসব দাবি আদায় করতে হবে। এই দাবি সারাদেশে সব স্তরের মানুষের মধ্য থেকে উঠে এসেছে। এবারের কংগ্রেসে এজন্যই ‘দুঃশাসন হটাও ব্যবস্থা বদলাও বিকল্প গড়ো’ স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে, কংগ্রেস সামনে রেখে পুরানা পল্টন কমিউনিস্ট পার্টি অফিসে দলটির নেতাকর্মীদের ব্যস্ত সময় কাটছে। কেউ ব্যস্ত মিটিং নিয়ে, কেউ ব্যস্ত ব্যানার-ফেস্টুন-আলপনা তৈরির প্রস্তুতি নিয়ে। আগামী মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে কংগ্রেসের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন