পিলখানা ট্রাজেডি: ১৩ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:১৪
ঢাকা: ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দাবি-দাওয়ার নামে পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) কিছু সৈনিক বিদ্রোহ শুরু করেন। এ সময় তাদের গুলিতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে হত্যা মামলার বিচার শেষ হলেও আটকে আছে বিস্ফোরক আইনের মামলা। এতে হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া আসামিরা বিস্ফোরক আইনে মামলার কারণে মুক্তি পাচ্ছেন না। এমনকি জামিনও পাননি তারা।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ১৩ বছর হয়ে গেলেও বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচার শেষ হয়নি। হত্যা মামলার খালাসপ্রাপ্ত ২৭৮ আসামি বিস্ফোরক মামলারও আসামি। হত্যা মামলায় খালাস পেয়েও বিস্ফোরক আইনের মামলার কারণে তারা মুক্তি পাননি। জামিন পাচ্ছেন না।
তিনি অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রপক্ষ হত্যা মামলায় রায় পাওয়ার পরও বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছে না।
এই সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, হত্যা মামলার বিচার নিম্ন আদালতের পর হাইকোর্টেও নিষ্পত্তি হয়েছে। কিন্তু বিস্ফোরক আইনের মামলায় এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। নিয়মিত সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছিল। মাঝে দুই বছর করোনার কারণে সাক্ষ্যগ্রহণ বিলম্বিত হয়। এখন আবার আদালতের কার্যক্রম চলছে। আশা করি মামলার বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ হবে।
পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে প্রথমে চকবাজার থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়। ২০১০ সালের ১২ জুলাই হত্যা মামলা এবং ২৭ জুলাই বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। পরের বছরের ১০ আগস্ট হত্যা মামলায় চার্জগঠন করে বিচার শুরু হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার স্থগিত ছিল।
হত্যা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের শেষপর্যায়ে ২০১৩ সালের ১৩ মে বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। ওই বছরের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়। কিন্তু বিস্ফোরক আইনের মামলাটির ১৩ বছরেও শেষ হয়নি বিচার।
রাজধানীর বকশিবাজারের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে এ মামলার কার্যক্রম চলছে। ১১৬৪ জন সাক্ষির মধ্যে এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ২১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ৯ ও ১০ মার্চ মামলাটি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে।
কারাবন্দি বিডিআর সদস্য মুসার ভাই মো. ওয়ারেছ বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিভাগীয় মামলা শেষ হয় ২০১১ সালে। এরপর হত্যা মামলাটি দুই বছর ১১ মাসের মধ্যে সকল আইনি কার্যক্রম শেষে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় প্রদান করেন আদালত। এ মামলা উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি হয় ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর। অথচ একইসঙ্গে হত্যা ও বিষ্ফোরক মামলার গেজেট হওয়া সত্ত্বেও বিষ্ফোরক মামলাটি কোনো এক অদৃশ্য কারণে আলাদা করা হয়, যা এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন। হত্যা মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পান ২৭৮ জন। এছাড়া স্বল্পমেয়াদী সাজাভোগ শেষ করা ১৯০ জন বিডিআর সদস্য রয়েছেন। সবমিলিয়ে ৪৬৮ জন বিডিআর সদস্য মুক্তির প্রহর গুনছেন। কিন্তু বিস্ফোরক মামলার কারণে খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ মুক্তি পাচ্ছেন না।
হত্যা মামলাটির রায়ে ঢাকার নিম্ন আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময় কারাগারে থাকা দুজন মারা যান। খালাস পান ১২ আসামি।
সারাবাংলা/এআই/এএম