Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আহ-হা, কী দারুণ দেখতে!

আসাদ জামান
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:০৮

‘আহ-হা, কী দারুণ দেখতে/ চোখ দু‘টো টানা টানা/যেন শুধু কাছে বলে আসতে/ কী দারুণ দেখতে/ ঠোঁট দু‘টো ভেজা ভেজা/ যেন শুধু বলে ভালোবাসতে/ আহ-হা, কী দারুণ দেখতে/ চোখ দু’টো টানা টানা’- বিষয়টি মোটেও তা না! এখানে টানা টানা চোখ বা ভেজা ভেজা ঠোঁট নেই। যেটা আছে, সেটা হলো- রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের অনিন্দ্য সুন্দর ‘অস্থায়ী স্টেশন’, ‘কন্ট্রোলরুম’, ‘নিয়ন্ত্রণকক্ষ’, ‘স্ট্রাইকিং রিজার্ভ’ ও ‘ব্ল্যাড ব্যাংক’।

বিজ্ঞাপন

অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানাংশের কালী মন্দিরের সামনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নান্দনিক ‘কন্ট্রোলরুম‘, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নয়নাভিরাম ‘অস্থায়ী স্টেশন‘, পুলিশের ‘ব্লাড ব্যাংক‘, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘নিয়ন্ত্রণ কক্ষ‘ এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৩ এর ‘স্ট্রাইকিং রিজার্ভ‘ সবার নজর কেড়েছে। বাংলা একাডেমিসংলগ্ন গেট দিয়ে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানাংশে প্রবেশের পর সবারই চোখ আটকে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় এসব প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী স্থাপনাগুলোয়।

বিজ্ঞাপন


ছোট্ট বাড়ির মতো করে তৈরি পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সামনে বাঁশ ও কাঠের বেড়া দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘ফুলের টব বাগান’। গাদা, নয়নতারা, কলিকা ফুলসহ নাম না জানা আট/দশ প্রকারের কয়েক শ’ ফুলের টব এবং পাম গাছ দিয়ে তৈরি এ ফুলের বাগান প্রকাশ করছে পুলিশের সুরুচির পরিমিতি।

কন্ট্রোলরুমের বাঙলো আকৃতির স্থাপনায় শোভা পাচ্ছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তারই কন্যা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি করে ছবি। পাশেই দৃশ্যমান পুলিশ প্রধান এবং ডিএমপি কমিশনারের ছবি। বৃক্ষ ছায়ায় লাল, সবুজ, সাদা ও হলুদ রঙের মিশেলে তৈরি এ কন্ট্রোলরুমের ভেতরে রাখা আসাবপত্রও নান্ননিকতায় ঠাসা। সেখানে বসেই মেলার সার্বিক নিরাপত্তায় নিজেদের কর্মকৌশল সাজায় পুলিশ কর্মকর্তারা আর মেলার মাঠে সেটা বাস্তবায়ন করেন বাহিনীর চৌকস সদস্যরা।

মেলায় এমন নান্দনিক কন্ট্রোলরুম সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, “এক দশক আগেও শুধুমাত্র সামিয়ানা টাঙিয়ে প্ল্যাস্টিকের চেয়ার-টেবিল পেতে আমরা দায়িত্ব পালন করেছি। দেশ এখন এগিয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো পুলিশও স্বচ্ছল ও সাবলম্বী হয়েছে। ফলে এ ধরনের মেলা বা রাষ্ট্রীয় আয়োজনে পুলিশের জন্য ‘স্মার্ট বরাদ্দ’ থাকে। সঙ্গত কারণেই নান্দনিক সাজসজ্জার বিষয়টি তখন মাথায় চলে আসে। আইজিপি স্যার ও কমিশনার স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও তত্ত্বাবধানে আমরা কাজগুলো সুন্দর মতো এগিয়ে নিয়ে যাই। মেলার কন্ট্রোলরুমের নান্দনিকতার ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছে।”


পুলিশ কন্ট্রোলরুমের পাশেই ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের অস্থায়ী স্টেশন। নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় এরা আরেক ধাপ এগিয়ে। হরেক রকম ফুলের টব এবং গাছের সমন্বয়ে স্টেশনের সামনের অংশ মোহনীয় করে তুলেছে তারা। স্টেশনের আঙিনায় লাল-সবুজের গাছের পাটাতনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। মেলা আসা দর্শনার্থী, বিশিষ্টজন এবং ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য আরাম কেদারা (স্ট্যাইলিস্ট চেয়ার), গোলাকৃতির চৌপায়া (রাউন্ড টেবিল), স্ট্যান্ড অ্যামব্রেলা (দণ্ডায়মান ছাতা) প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

শুধু নান্দনিক অঙ্গসজ্জা নয়, বইমেলার মাহত্ম্য বজায় রাখতে ২০টির অধিক প্রকাশনা নিয়ে হাজির হয়েছে তারা। ১০/১৫ ক্যাটাগরির বইয়ের সমন্বয়ে তাদের এই প্রকাশনা মন যোগাতে বা জাগাতে নয়, বরং জীবনের প্রয়োজনে। বিপদে-আপদে তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা ও জীবন রক্ষায় করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা রয়েছে এসব বইয়ে। চার রঙের সচিত্র এই দিক-নির্দেশনা রপ্ত করতে পারলে যে কেউ বিপদের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স প্রকাশিত বই, ম্যাগাজিন, অ্যালবাম ও গাইড থেকে।


উন্নতমানের কাগজ, প্লাস্টিক হার্ডবোর্ড বাঁধাই, ঝকঝকে ছাপা, ফুলকালার ছবি ও পেইন্টিং সম্বলিত এসব বই, ম্যাগাজিন, অ্যালবাম বিশেষ ছাড়ে বিক্রি করছে ফায়ার সার্ভিস। বাচ্চাদের উপযোগী করে লেখা ‘বজ্রপাতে নিরাপত্তা’, ‘ভূমিকম্পে সচেতনতা’, ‘আগুন থেকে সাবধান’, ‘জাহাজের আগুন’, বইগুলোর গায়ের মূল্য ২৫০ টাকা হলে হলেও মেলা উপলক্ষে বিক্রি করছে মাত্র ১০০ টাকায়।

আর বড়দের জন্য লেখা ‘হ্যাজমেট রেসপন্স গাইড’, ‘Landslide Response’, ‘স্ট্রাকচারাল ফায়ার ফাইটিং’, ‘স্ট্যাডি গাইড অব ফায়ার, রেসকিউ অ্যান্ড হেল্থ সেফটি’ বইগুলোর গায়ের মূল্য ৬০০/৭০০ টাকা হলেও মেলা উপলক্ষে বিক্রি করছে মাত্র ৩০০ টাকায়। নিজের নিরাপত্তায় নিজেকে দক্ষ করে তোলার ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স প্রকাশিত বইগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান ফায়ার ফাইটার শফিকুল ইসলাম।

শুধু প্রকাশনা নয়, যে কোনো দুর্ঘটনায় দ্রুত উদ্ধার তৎপরতায় ব্যবহৃত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছে ফায়ার সার্ভিস। এগুলোর মধ্যে `Hydraulic Spreader’, `Hydraulic Cutter’, `Holmatro’, `Chipping Hammer’ ক্যাটাগরির যন্ত্রপাতিগুলো বিস্ময় দৃষ্টিতে দেখছেন দর্শনার্থীরা।

ফায়ার ফাইটার সোহাগ (বুকে ঝোলানো নেমপ্লেটে নামের এ অংশটুকুই ছিল) এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সীমিত পরিসরে প্রায় ২০ ক্যাটাগরির যন্ত্রপাতি এখানে আনা হয়েছে। মেলা আসা পাঠক ও দর্শনার্থীরা খুব আগ্রহের সঙ্গে এগুলো দেখছেন। কেউ কেউ এর কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আমরা চেষ্টা করছি কৌতুহল মেটাতে।’


ও, হ্যাঁ পুলিশ কন্ট্রোলরুম ও ফায়ার সার্ভিসের এই দুই অনিন্দ্য সুন্দর স্থপনার অদূরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৩ এর ‘স্ট্রাইকিং রিজার্ভ‘, পুলিশের ‘ব্লাড ব্যাংক‘, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘নিয়ন্ত্রণ কক্ষ‘। তারাও খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে তাদের স্থাপনাগুলো।

আর্তমানবতার সেবা, মেলার সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি নিজেদের কর্মকাণ্ডের ইতিবাচক উপস্থাপনে যে রুচিবোধের পরিচয় দিয়েছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই পাঁচ প্রতিষ্ঠান, তাতে বলতেই হয়, ‘আহ-হা কী দারুণ দেখতে’!

সারাবাংলা/এজেড/এমও

ডিএমপি ফায়ার সার্ভিস বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর