ইসি আমলানির্ভর, পেশাজীবীদের সমন্বয় হলে ভালো হতো
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:২৯
ঢাকা: সরকার গঠিত সার্চ কমিটির কাছে আমলাদের প্রাধান্য না দিয়ে সব পেশার সমন্বয়ে যোগ্যদের নিয়ে একটি ভারসাম্যমূলক নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের দাবি করেছিল দেশের সুশীল সমাজসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈদিক দল। পাশাপাশি দাবি ছিল, যোগ্যতার ভিত্তিতে কমিশনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও নারীদের প্রতিনিধিত্ব রাখা জন্য। কিন্তু শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) গঠিত পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনে একজন নারী সদস্য রাখা হলেও সেখানে কোন সংখ্যালঘু প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এছাড়া বরাবরের মতো এবারের নির্বাচন কমিশনেও আমলাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিমত বিশিষ্টজনদের। তাদের মতে, কোটা প্রথা থেকে বের হয়ে বিভিন্ন পেশার সমন্বয়ে নতুন ইসি গঠন করা হলে ভালো হতো।
এ ব্যাপারে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সার্চ কমিটিকে আমরা বলেছিলাম কোটা নির্ভর কমিশন থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেজন্য সব পেশার সমন্বয়ে একটা নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি ছিল আমাদের। দাবি অনুযায়ী নতুন কমিশন গঠন করা হলে তা সব দল ও মতের মানুষের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হতো। কিন্তু ইসি গঠনে তার কোন প্রতিফলন আমরা দেখতে পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘সব জায়গায় যদি আমলাদের প্রধান্য দেওয়া হয় তাহলে দেশটা আমলানির্ভর হয়ে পড়বে এবং তা হয়েছেও। আমরা সার্চ কমিটিকে আমলানির্ভর কমিশন থেকে বের হয়ে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের কথা মানা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমলা নির্ভর না হয়ে কমিশন যদি সব পেশার সমন্বয়ে হতো তাহলে নির্বাচন কমিশন সবদলের কাছে হয়তো আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হতো।’
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সার্চ কমিটিকে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার কথা আইনে বলা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশনও একই ছকে করা হয়েছে। এখানে তিন জন আমলাকে রাখা হযেছে। বাকি দু্ইজনের একজন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা এবং অপরজন হলেন বিচার বিভাগের । ফলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করার ক্ষেত্রে পূর্বের ছক থেকে বের হওয়া যায়নি। এটা কেন করা হয়েছে তা বোধ্যগম্য নয়।’
নতুন নির্বাচন কমিশন কেমন হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নতুন কমিশনে দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তিদের সর্ম্পকে আমাদের খুব বেশি ধারণা নেই। ফলে তারা কেমন করবেন কিংবা কমিশন কেমন হয়েছে এটা বলা সম্ভব নয়। তবে এটা বলব, সার্চ কমিটি স্বচ্ছতার সঙ্গে তাদের কাজটি করেনি।’
অন্যদিকে বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষে একটা দাবি ছিল, সব পেশার লোকদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তবে সার্চ কমিটিকে আমাদের কথা শুনতেই হবে বিষযটি এমন নয়।’
তিনি বলেন, ‘সব পেশার সমন্বয়ে কমিশন গঠন করলে আরও ভালো হতো। তবে নতুন কমিশন ভালো করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে একটি আইন করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনে তিন জন সিনিয়র সচিব এবং একজন সামরিক কর্মকর্তা রযেছেন। যারা সবাই নিজ নিজ পেশায় স্বনামধন্য। তবে তাদের অনেক সাবধানী ও রক্ষণশীল হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন সিইসিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি। আমি আশা করি তার নেতৃত্বাধীন কমিশন ভালো করবে। তবে নির্বাচন যেন সবার অংশগ্রহণমুলক হয় সেদিকে সাবধানী হতে হবে।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম