বন্ধ হচ্ছে না প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগ, গণটিকা আরও ২ দিন
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:৪২
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগ বন্ধ হচ্ছে না। নিয়মিত ভ্যাকসিন কেন্দ্রে স্বাভাবিকভাবেই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ প্রয়োগ করা হবে। তবে ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া গণটিকা কর্মসূচির মেয়াদ আরও দুইদিন বাড়ানো হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গণটিকা দেওয়া হবে সারাদেশে।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি বলেন, গণটিকা প্রয়োগ কর্মসূচির মেয়াদ আরও দুদিন বাড়ছে। আগামী ২৮ তারিখ পর্যন্ত গণটিকা কর্মসূচির আওতায় ভ্যাকসিন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড়ের কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মানুষের বিপুল আগ্রহ দেখে গণটিকার মেয়াদ আরও দুদিন বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান অধ্যাপক ফ্লোরা।
তিনি বলেন, যেসব কেন্দ্রে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য বেশি ভিড় থাকবে সেসব কেন্দ্রে দুদিন ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তবে কোন কোন কেন্দ্রে দুই দিন ভ্যাকসিন দেয়া হবে সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে। আজকেও যতক্ষণ মানুষ কেন্দ্রে থাকবে ততক্ষণ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারির পরেও আমাদের স্বাভাবিক ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান থাকবে। তখন দ্বিতীয় ডোজ আর বুস্টার ডোজের পাশাপাশি কেউ প্রথম ডোজের জন্য এলে তাকেও আমরা ভ্যাকসিন দেবো। দেশে যতজন ভ্যাকসিনের উপযুক্ত, তাদের সবাইকে আমরা ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচির আওতায় আনব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টার্গেট অনুযায়ী আমাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ কোটি। এর বেশি দিতে পারলে আমরা তাই দেবো।
এদিন গণটিকা কার্যক্রম ও পরবর্তী করণীয় বিষয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম আজকের পরও চলমান থাকবে। দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজের সাথে প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগও চলবে।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ অতিক্রম করেছে। আজ (শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি) এক কোটিরও বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা ১২ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, দেশে একদিনে এক কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া একটি বড় অর্জন। এর আগে আমরা এক দিনে ৮০ লক্ষেরও অধিক ভ্যাকসিন দিয়েছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন দেওয়ার সংখ্যার দিকে আমরা বর্তমানে বিশ্বে দশম স্থানে আছি। বড় বড় রাষ্ট্রসহ ১৯০টি দেশ আমাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে। রাশিয়া, জার্মানিসহ আরও অনেকের থেকে আমরা এগিয়ে আছি টিকাদানের ক্ষেত্রে।
এর আগে শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কেন্দ্রগুলোতে একযোগে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনের কার্যক্রম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এক কোটি ডোজ করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার বিশেষ ক্যাম্পেইনে এদিন সকাল থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। নিবন্ধন বা জন্মসনদের বাধ্যবাধকতা না থাকায় মানুষ ভিড় করেছেন কেন্দ্রগুলোতে।
১৫ ফেব্রুয়ারি এই ক্যাম্পেইন বিষয়ে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় জানান, ২৬ ফেব্রুয়ারি ‘বিশেষ টিকা ক্যাম্পেইন’ পরিচালনা করা হবে। এ দিন শুধু মোবাইল নম্বর দিয়েই ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে। নিবন্ধন না থাকলেও দেওয়া হবে ভ্যাকসিন। এর পরে আর প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, অধিক সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে ২৬ ফেব্রুয়ারি এক কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে আমাদের প্রথম ডোজ দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হবে। পরে দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবো।
এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই বিষয়ে নানাভাবে প্রচারণা চালালেও ২২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান ভিন্ন কথা।
২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মহাখালীতে বিসিপিএস ভবনে ‘২৬ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য একদিনে এক কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সবাইকে আহ্বান করব ভ্যাকসিন নেওয়ার। আমরা সবাইকে ভ্যাকসিন দেব। এরপর থেকে দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজের কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকব। তবে সাময়িকভাবে প্রথম ডোজে একটু দৃষ্টি কম থাকলেও কার্যক্রম চলমান থাকবে।
সারাবাংলা/এসবি