বিচার না পেলে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে আমরণ অনশন
১ মার্চ ২০২২ ২৩:৫৫
ছাত্রলীগের রাজনীতি না করায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আগের আলটিমেটাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপরাধীদের শাস্তির ঘোষণা না আসায় তারা প্রতিবাদে নামেন।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) দ্বিতীয় দিনের প্রতিবাদ থেকে শিক্ষার্থীরা দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তারা বলেন, নিহাদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে বুধবার (২ মার্চ) মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করবেন। আর বুধবারের মধ্যে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) আমরণ কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষার্থীরা।
এদিন শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ মিছিল সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সমবেত শিক্ষার্থীরা ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘প্রশাসন নিরব কেন, জবাব চাই জবাব চাই’— এরকম বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল আন্দোলনের পর থেকে আমাকে নজরদারি করে রেখেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না এলে হয়তো হামলার শিকার হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলব— হয় সন্ত্রাসীদের ছাঁটাই করুন, না হয় আমাদেরই ছাঁটাই করুন।
আরও পড়ুন- ‘ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে পারবি না, আবরারের মতো মরবি’
শিক্ষার্থীরা বলেন, এখন সন্ত্রাসীদের ছাড় দেওয়া হলে একসময় এরাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাথায় উঠে বসবে। আমরা দূর থেকে এসেছি। আমাদের তো এরা পাত্তায় দেয় না, এখনই তাদের বিচারের আওতায় না আনতে পারলে কাল আপনাদেরও পাত্তা দেবে না।
এদিকে, ওয়ালিদ নিহাদের বিভাগ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে বুধবার থেকে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ঘোষণা করেছেন নিহাদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে নিহাদকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ না করার হুমকি দিয়ে তাকে বলা হয়, ‘বেশি কথা বললে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে পারবি না, আবরারের মতো মরবি।’
এ ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা এর বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে আন্দোলন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। কিন্তু ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন ছাড়া আর কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
এ বিষয়ে জাককানইবি প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, শিক্ষার্থী মারধরের অভিযোগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ মাসুম হাওলাদারকে প্রধান করে এ কমিটি করা হয়েছে। তাছাড়া উপাচার্য স্যার আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ক্যাম্পাসে আসবেন। তখন আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।
ওই কমিটির প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মাসুম হাওলাদার শিক্ষার্থীদের বলেন, আমরাও চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। তবে আমাদের কমিটির যে পর্যবেক্ষণ, তা আমরা সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রশাসনকে জানিয়ে দেবো। প্রশাসন এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে, নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীকে সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে ত্রিশাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহাদের বড় ভাই জিহাদ হাসান জানান, নিহাদ চিকিৎসদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তাকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।
সারাবাংলা/টিআর