ছাত্রলীগ সভাপতিকে সালাম না দেওয়ায় শিক্ষার্থীকে নির্যাতন
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৮ | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:৪৯
যশোর: ছাত্রলীগের সভাপতির সামনে লুঙ্গি পরে অবস্থায় চলাচল ও সালাম না দেওয়ায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের আবাসিক এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে যবিপ্রবির শহীদ মসীয়ূর রহমান হলের ৩০৮ নম্বর কক্ষে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার মো. মাঞ্জুরুল হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন এবং যশোর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি ও হলের প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা, ছাত্রলীগ কর্মী ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ফয়সাল আহমেদ, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ইসাদ হোসেন, আল আমিন, শেখ বিপুল হাসান ও মুশফিক, ফার্মেসি বিভাগের রাইসুল হক রানাসহ অজ্ঞাত কয়েকজন আসামি করা হয়েছে আরও কয়েকজনকে।
এদের মধ্যে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার দায়ে সম্প্রতি অভিযুক্ত ফয়সাল আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিস্কার করেছিল। তারপরও তিনি ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় ছাত্রাবাসে অবস্থান করেন।
আহত মাঞ্জুরুল হাসান লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, শুক্রবার রাতে আমি শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩০১ নম্বর রুম থেকে বের হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানাকে সালাম না দেওয়া এবং লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় তার সামনে চলাচলের কারণে সভাপতির নির্দেশে আমাকে আমার কক্ষ থেকে ডেকে ৩০৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সভাপতির নির্দেশে আমাকে মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে আমার চিৎকারে হলের অন্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এলে তারা হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
আহত মাঞ্জুরুল হাসান যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে শনিবার বিকেলে আবার ছাত্রাবাসে উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার দুই চোখেই সমস্যা, তেমন একটা দেখতে পাই না। রাতে আমি যখন লুঙ্গি পরে বাইরে যাচ্ছিলাম; তখন ছাত্রলীগের সভাপতিসহ তার কর্মীরা আমার সামনেই পড়ে যায়। এরপর তারা ফিরে এসে আমাকে আমার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে ৩০৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে বেধড়ক মারমিট করে। মারপিটের একপর্যায়ে আমাকে তারা হুমকি দেয়, এই ঘটনা কাউকে জানালে তোরে গুম করে ফেলবো।’
তবে আবাসিক ছাত্রাবাসে কোন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়নি দাবি করে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ‘রাতে আমাদের শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ফিশারিজ ও মেরিন বায়োসায়েন্সের কিছু ছেলে আমার রুমের সামনে জুনিয়রদের সাথে চিল্লাপাল্লা করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে তাদের বুঝিয়ে যার যার কক্ষে যেতে বলি। কাউকে মারা হয়নি আর যারা বিশৃঙ্খলা করছিলো তারা ছাত্রলীগের কেউ না। মাঝে মধ্যে তারা প্রোগামে আসে। ক্যাম্পাস রাজনীতির গ্রুপিংয়ে বলি হিসেবে আমাকে দোষারোপ করা হচ্ছে।’
শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মো. তানভীর ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার রাতে মারামারির ঘটনা শুনে আমি আমার সহকারী প্রভোস্টদের নিয়ে ছাত্রাবাসে আসি। এসে দেখি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। পরবর্তীতে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে শনিবার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে অভিযুক্ত ও ছাত্রাবাসে অবস্থান করা বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এমও
ছাত্রলীগ সভাপতি টপ নিউজ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীকে নির্যাতন