জয়পুরহাটে জমির মাটি কেটে সড়ক সংস্কার, ক্ষতির শিকার কৃষকরা
২ মার্চ ২০২২ ০৮:৪২
জয়পুরহাট: জেলার সদর উপজেলায় এলজিইডির রাস্তা সংস্কারের কাজে কৃষকদের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। রাস্তার দুইপাশের ফসলি জমি থেকে মাটি নেওয়ার অনুমতি না থাকলেও এস্কেবিউটর (ভেকো) মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে খনন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা।
সরেজমিনে জানা যায়, জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের দূর্গাদহ বাজার থেকে হরিপুর পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কটি এলজিইডির ব্যবস্থাপনায় ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইথান এন্টারপ্রাইজ। অন্য স্থান থেকে মাটি এনে কাজ করতে হবে, এমন চুক্তি আছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এলজিইডির। কিন্তু চুক্তির নিয়ম উপেক্ষা করে স্থানীয় কৃষকদের ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে জোরপূর্বক রাস্তার দুপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে এস্কেভেটর (ভেকো) মেশিন দিয়ে সরু গভীর করে মাটি কেটে রাস্তা বর্ধিত করছেন ঠিকাদারের প্রতিনিধিরা।
জানা গেছে, স্থানীয় সহজ সরল গ্রামের কৃষকরা তাদের ফসলি জমি থেকে মাটি কাটতে বাধা দিলে কোনো কিছুই তোয়াক্কা না করে উল্টো হুমকি দিচ্ছেন এমন অভিযোগ দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও সড়কে দুইপাশ সরু গভীর হওয়ায় সড়কটিও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
ছাওয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে অবশ্যই রাস্তা চাই। কিন্তু আমাদের আলু, সরিষা, ধানসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট করে মাটি কেটে রাস্তার দুইপাশে ভরাট করা হচ্ছে। বাধা দিতে গেলে ঠিকাদারের লোকজন হুমকিও দিচ্ছেন।
একই এলাকার ডাবলু চন্দ্র, আব্দুল হাকিম, সেলিনা বেগম ও বাদল চন্দ্র জানান, ঠিকাদার খুবই প্রভাবশালী। তাই আগে থেকে কোনো নোটিশ না দিয়ে বা না জানিয়ে রাস্তার দুইপাশে তাদের জমি থেকে ইচ্ছামতো আলু, সরিষা, কলারগাছ, সদ্য রোপন করা ধান নষ্ট করে এস্কেবিউটার মেশিন দিয়ে ৫ থেকে ৮ ফিট গভীর ও ৬ থেকে ৮ ফিট প্রশস্ত করে জোরপূর্বক মাটি কেটে রাস্তার দুইপাশে দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় ভাদসা ইউপির মেম্বার লিটন বলেন, আমি এলাকার কৃষকদের অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ঠিকাদার মেশিন দিয়ে ৭ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত গভীর করে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ করে খালের মতো মাটি খনন করেছেন। আমি বাধা দিলেও আমার কোনো কথা শোনেননি। কারণ তারা নাকি অত্যন্ত প্রভাবশালী।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অশোক ঠাকুর জানান, ঠিকাদারকে অন্য জায়গা থেকে মাটি কেনার জন্য এলজিইডি অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। তারপরও অসাধু ঠিকাদার অসহায় কৃষকদের অর্থ না দিয়েই তাদের ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি খনন করে যে ক্ষতি সাধন করেছে, তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এছাড়াও ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।
এ নিয়ে কথা বলতে নওগাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইথান এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী রাসেলকে ফোন করা হলে তিনি জরুরি কাজে ব্যস্ত আছেন বলে লাইন কেটে দেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জয়পুরহাট সদর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোবারক হোসেন জানান, বিষয়টি ঠিকাদারকে জানানো হয়েছে। ঠিকাদার অন্যত্র থেকে মাটি আনবেন। ফসলের ক্ষতি না করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/এএম