এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা
২ মার্চ ২০২২ ১৯:৪০
ঢাকা: করোনা মহামারির কারণে বছরজুড়ে নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এটি মোট ঋণের ৮ শতাংশ।
এর আগে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সেটি ছিল মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সে হিসাবে গত এক বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।
বুধবার (২ মার্চ) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণসংক্রান্ত সবশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তিন মাস পর পর এই তথ্য প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের হিসাব বলছে, সবশেষ তিন মাসে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ১২৪ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে মোট ঋণ স্থিতি ছিল ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর গত বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ১৩ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা।
জানা গেছে, নতুন খেলাপি ঋণের মধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকে। বিপরীতে সরকারি ব্যাংকে বেড়েছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর ফলে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য আরও বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক যত ঋণ বিতরণ করেছে, তার মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশই খেলাপি হয়ে আছে। এই এক বছরে সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতির অবনতি হলেও বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
খেলাপি ঋণের এ চিত্র নিয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দিচ্ছে, আসল অঙ্ক তার চেয়েও অনেক বেশি। ফলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আমাদের অজানা।
তিনি বলেন, ঋণ আদায় না করে এবং ঋণ খেলাপিদের নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী মজা পাচ্ছে— এটি আমার মাথায় ঢোকে না।
সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ও বেসিক— এই ছয় ব্যাংক মোট ঋণ বিতরণ করেছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের মধ্যে ১৯ দশমিক ২৮ শতাংশই খেলাপি ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। ওই সময় খেলাপি ঋণ ছিল ৪২ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো গত বছর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ৭০ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫১ হাজার ৫২০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৪০ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
এই হিসাব বলছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। এর ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণের দিক থেকে সরকারি ব্যাংকগুলোকে ছাড়িয়ে গেল বেসরকারি ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অবশ্য দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই ঋণখেলাপিদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। এর মধ্যে প্রথমেই ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ঋণের কিস্তি দিতে না পারলেও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে ঋণ বা বিনিয়োগের ওপর কোনোরকম দণ্ড, সুদ বা অতিরিক্ত ফি (যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন) আরোপ না করতেও বলা হয়। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব সুবিধার কারণে ২০২০ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়েনি। কিন্তু ওই সব সুবিধাও কিছু কিছু অব্যাহত থাকলেও গত এক বছরে এসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর