বাড়ি ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল হাদিসের, চলছিল প্রস্তুতি
৩ মার্চ ২০২২ ১১:২০
বরগুনা: বাংলাদেশের তরুণ মেধাবী মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমানের সব কর্মচাঞ্চল্য থেমে গেল ইউক্রেনে। সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিলেন মাস ছয়েক আগে। তবে পরিবারের সঙ্গে নিয়মিতই যোগাযোগ ছিল তার। সবশেষে গত বৃহস্পতিবার বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জানিয়েছিলেন, আটকে থাকা জাহাজ ছাড়া পেলে শীঘ্রই বাড়ি ফিরবেন। তাই বিয়ের জন্য স্বজনেরা মেয়েও দেখে রেখেছিলেন।
কিন্তু গত বুধবার (২ মার্চ) ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ রাশিয়ার গোলা হামলার শিকার হয়েছে। ওই দিন স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে এ হামলা হয়। এতে জাহাজে আগুন ধরে নিহত হন হাদিসুর রহমান (২৯)। এ ঘটনায় তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
হাদিসুর রহমান বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। চার ভাই বোনের মধ্যে হাদিস মেজো। হাদিসের চাচাতো ভাই বেতাগী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান।
এ বিষয়ে মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘হাদিস ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিল। সে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে পাস করার পর ২০১৮ সাল থেকে ওই জাহাজে ছিল। অবিবাহিত ছেলেটা সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিল মাস ছয় আগে। ’
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজে হামলা, প্রকৌশলী নিহত
হাদিসের স্বজনরা জানান, আট বছর ধরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিভিন্ন জাহাজে চাকরি করেন হাদিসুর। গতকাল বুধবার জাহাজ থেকে ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্সকে ফোন করেন হাসিদ। তবে বিকট শব্দের কারণে কিছুই শুনতে পারেননি তিনি। এর মধ্যে হাদিসুর জাহাজের সামনে বাইরে অবস্থান করায় রকেট হামলার সঙ্গে সঙ্গে নিহত হয়েছেন তিনি।
হাদিসুর রহমানের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বলেন, গোলার আঘাত হানার সময় বড় ভাই বাইরে এসে মুঠোফোনে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তবে হঠাৎ একটি গোলা এসে পড়ে জাহাজটিতে। বিকট শব্দের কারণে কিছুই শুনতে পাইনি।
এদিকে একমাত্র ছেলে নিহত হওয়ার খবর পেয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন হাদিসুরের মা-বাবা। শোকে মুহ্যমান পরিবারের অন্য স্বজনেরা। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা খবরটা জানতে পারেন। হাদিসুরের মৃত্যুর খবরে এলাকার মানুষের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
হাদিসুর রহমানের মা আমেনা বেগম ছেলে হারানোর শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, গত বুধবার হাদিস আমাকে ফোন দিয়েছিল। ডাক্তার দেখিয়েছি কি না জানতে চেয়েছে। এরপর সবশেষে গতকাল ভিডিও কলে কথা হয়। এরপর তার রাতে তার মৃত্যুর খবর পাই।
জানা যায়, বাংলাদেশের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছায়। ওই দিনই দেশটিতে রাশিয়ার হামলা শুরু হলে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। একইসঙ্গে জাহাজে আটকা পড়েন ক্যাপ্টেন জি এম নুর ই আলম, চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুকসহ ২৯ বাংলাদেশি নাবিক। ইউক্রেনে হামলা শুরুর সপ্তম দিনে বাংলাদেশি জাহাজটিতে গোলার আঘাতের ঘটনা ঘটল। সমুদ্রগামী জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ ২০১৮ সালে বিএসসির বহরে যুক্ত হয়।
সারাবাংলা/এনএস
ইউক্রেন এমভি বাংলার সমৃদ্ধি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান