Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অধিকার ভোগের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৬ মার্চ ২০২২ ১৯:০৫

ফাইল ছবি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের যেমন নাগিরক সুবিধা ভোগ করার অধিকার আছে আবার তাদের নাগরিক দায়িত্বও পালন করতে হবে। যারা অধিকার ভোগ করবে তাদের দায়িত্বও পালন করতে হবে। আপনারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ঘরবাড়ি শুধু না নিজের সামনের রাস্তাটাও যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, এই পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।

রোববার (৬ মার্চ) দুপুরে ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ-১)’ শীর্ষক প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন কাজের উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৪৪ নং ওয়ার্ডের কাঁচকুড়া হাইস্কুল মাঠে যুক্ত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় জীবনে মার্চ মাসের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই স্মৃতি নিয়েই আজ আমরা বেঁচে আছি এবং এগিয়ে যাচ্ছি। সেই চেতনা নিয়েই আমরা প্রেরণা পাচ্ছি দ্রুত বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসতে। অন্তত ২০২২ সালে এসে এইটুকু দাবি করতে পারি, আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। যে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে।’

টানা মেয়াদে সরকার পরিচালনায় দায়িত্ব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘তারা বারবার ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছেন বলেই সরকারের ধারাবাহিকতা ছিল বলেই আজকে উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে। আমরা চাচ্ছি, বাংলাদেশটাকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলতে। যাতে এদেশের প্রত্যেক নাগরিক তার নাগরিক সুবিধাটা ভোগ করতে পারে, উন্নত জীবন পেতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

ঢাকা শহর একসময় ছিল ছোট একটা শহর এবং চারিদিকে নদী-বিধৌত। খুব স্বাভাবিকভাবে একটি স্বাধীন দেশের রাজধানী হিসেবে এটির গুরুত্ব বেড়ে যায়, জনসংখ্যা বেড়ে যায়। তাছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের লক্ষ্যটা ছিল তার উন্নয়নের চিন্তাভাবনা ছিল, সেটা ছিল একেবারে তৃণমূলের মানুষ থেকে তাদের জীবনমান উন্নত করা। অর্থ্যাৎ ক্ষমতাটাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে যেন উন্নয়নটা আসে। কিন্তু ৭৫’র জাতির পিতাকে হত্যার পর সেটা করা হয়নি। যার ফলে ধীরে ধীরে ঢাকা অর্থ্যাৎ মানুষ রাজধানীমুখী হয়ে পড়ে কর্মসংস্থানের জন্য, জীবন-জীবিকার জন্য। যার জন্য চাপটাও বেশি আসে।’

‘তাছাড়া একটা বিপ্লবের পর একটা বিবর্তনও হয়। কিছু মানুষ খুব আর্থিক স্বচ্ছলতা পেয়ে যায়। কিছু মানুষ হয়ত একেবারে হারিয়ে যায়। সেই ক্ষেত্রে ঢাকা শহরের ওপর একটা প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে জনসংখ্যার— বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

এই শহরটা খুব একটা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেনি অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যততত্রভাবে যে যেটা পেরেছে গড়ে তুলেছে। যার ফলে ধীরে ধীরে এতো মানুষের চাপ, এটা যেন মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।’

যখন সিটি করপোরেশন করা হল একটা মাত্র সিটি করপোরেশন। অথছ জনসংখ্যা বিশাল। কাজেই একটা সিটি করপোরেশন দিয়ে এতো মানুষের সেবা দেয়া অসম্ভব ব্যাপার ছিল। কারণ এতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, এটা কখনো সম্ভব হয় না।

এক্ষেত্রে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে উত্তর-দক্ষিণ দুইভাগে করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বহুদিন থকে বলছিলাম প্রকল্প নিতে হবে। প্রকল্প নিলেই তখন আমরা কাজ করতে পারব। এরইমধ্যে আমরা অনেকগুলো কাজ শুরু করেছি। রাস্তাঘাট করা, মেট্রোরেলের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে, তিনশ ফিটে দুপাশে একশ ফিট খালসহ রাস্তা হচ্ছে। র‌্যাপিড ট্রানজিটও করে যাচ্ছি ঠিকই। কিন্তু আমাদের যে ইউনিয়নগুলো ছিল সেগুলোকে ওয়ার্ডে উন্নীত করার পর সেখানকার মানুষের জীবনমান উন্নত করা এটা একান্তভাবে অপরিহার্য ছিল। কাজেই আজকের এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমি মনে করি যারা এসব এলাকায় বসবাস করেন তারা সকলে সুন্দর চমৎকার একটা জীবন পাবেন এবং নাগরিক সুবিধাগুলো তাদের ঘরের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের একটি কথা বলব যে, আসলে আমাদের অনেক বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আমি প্রত্যেকটা মানুষের কাছে আবেদন করব, এখানে যেহেতু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আছেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমরা দিয়েছি আমাদের সেনাবাহিনীর ওপর। আমি দেখেছি যত কঠিন কাজ হয় আমরা তাদেরকেই দায়িত্ব দেই এবং অত্যন্ত সুচারুভাবে তারা সেটি পালন করে এবং বাস্তবায়ন করে।’

এক সময়কার বিদ্যুৎ খাতের দুর্দশার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় বিদ্যুৎ মানুষ পেত না। কবে আসবে সেই আশায় বসে থাকত। আমি যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি মাত্র ১৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম। আজকে বিদ্যুতের জন্য বসে থাকতে হয় না, বিদ্যুৎটা পাচ্ছেন। এটি পাওয়ার সাথে যে অনুরোধটা আমি করব, এক এক কিলোওয়াট বা এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে কিন্তু অনেক বেশি টাকা খরচ হয়, সেখানে আমরা ব্যাপকহারে ভতুর্কি দিচ্ছি। বিদ্যুৎ সুবিধা সবাই ভোগ করবেন, ভতুর্কিটা আমরা দেব কোথা থেকে? এটা তো জনগণের টেক্সের টাকায় দিতে হচ্ছে। কাজেই যারা ব্যবহার করবেন উৎপাদনের খরচটা তো তাদের দিতে হবে। তবেই না আপনি সুবিধাটা ভোগ করতে পারবেন। তারপরও মানুষের জীবনমান যেন উন্নত হয়, সেজন্য ভতুর্কি দিয়ে যাচ্ছি।’

‘এখানে আমার অনুরোধ থাকবে, বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ করতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। একই অবস্থা আসে পানির। পানির সরবরাহ তো ছিলই না বলতে গেলে। এক গাড়ি করে পানি কিনতে হতো ওয়াশা থেকে। দাম লেখা থাকত দেড়শ টাকা কিন্তু দিতে হত ১৫’শ টাকা। এখানেও একটা বিরাট খেলার ব্যাপার ছিল, দুর্নীতিও ছিল— বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশে যে কয়টা ওয়াটা ট্টিটমেন্ট প্ল্যান্ট তার সবগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তাই পানি ব্যবহারেও প্রত্যেক নাগরিককে সাশ্রয়ী ও অপচয় বন্ধ করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ আমরা যে পানি পরিশুদ্ধ করে দেই, সেটা দিয়ে তো সব কাজেই চলে। গাড়ি ধোঁয়া থেকে শুরু করে কনস্ট্রাকশনের কাজ থেকে শুরু করে সব করেন। কিন্তু এই পানি পরিশুদ্ধ করতে কত টাকা খরচ হয় সেই হিসেবটা একটু জেনে নেবেন? সেখানেও আমাদের ভতুর্কি দিতে হচ্ছে। সেখানে ভতুর্কি দেওয়া কিন্তু ঠিক না। তাই বিল কমাতে পারেন, বিদ্যুৎের বিলও কমাতে পারেন, পানির বিলও কমাতে পারেন, গ্যাসের বিলও কমাতে পারেন, যদি একটু আপনি সচেতন হন, সাশ্রয়ী হন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে ঢাকা শহর সুবজ ছিল, গাছ ছিল। সেগুলো কিন্তু অনেক কমে গেছে। তাই আমার অনুরোধ থাকবে যা যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, আপনারা একটু বৃক্ষরোপণ করবেন। ছাদ বাগান করবেন। যেখানে পারেন, যাতে একটু সবুজ থাকে, পরিবেশটা ঠিক থাকে সেদিকে নজর দেবেন।’

‘সব থেকে খারাপ কাজ যেটা হয়ে গেছে, সেটি হচ্ছে বক্স কালভার্ট। যেখানে উন্মুক্ত খাল ছিল এই খালটা রেখে দুপাশে রাস্তা করা যেত। বা পিলার দিয়ে তার ওপর দিয়ে এলিভেটেড রাস্তা করা যেত। কিন্তু বক্স কালভার্ট করার ফলে জলাবদ্ধতাও হয় আবার সেখানে ময়লাও জমে, আবার নানা ধরনের সমস্যাও সৃষ্টি হয়। আর অনেক খাল বেদখল হয়ে যায়, মানে খাল তো এসমাইলি সম্পত্তি যে যেখানে পারে ঘরবাড়ি তৈরি করে দখল করে নেয়, দোকানপাঠ করে নেয়। তাই সেটা উদ্ধার করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

মুজিববর্ষের অঙ্গীকার একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ঢাকা শহরে বস্তিবাসী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, বেদে সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন উদ্যোগ করে তা বাস্তবায়ন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। কোনো নাগরিক কষ্টে থাকুক সেটা আমি চাই না। কারণ বস্তিতে একটা মানবেতর জীবনযাপন তারা করে। এটা একটা মানুষের জন্য বাস উপযোগী না বা সেই পরিবেশও থাকে না। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যও নষ্ট হয়।

এরা আমাদের দেশের নাগরিক। তাদের সব সুযোগ-সুবিধা আমাদের দেখা দরকার। কাজেই মুজিববর্ষ শুধু আমরা উদযাপনের মধ্য দিয়ে না মুজিব বর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তার প্রত্যেকটা নাগরিক যেন অর্থবহ জীবন পায়, সুন্দর জীবন পায় সেটাই আমার লক্ষ্য। আর কিছু না। সেজন্য আমাদের সিদ্ধান্তই হচ্ছে আমরা তাদের জন্য ঘর করে দেব।

কাঁচকুড়া হাইস্কুল মাঠ প্রান্তে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, পল্রী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রমুখ।

অধিকার ভোগের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের যেমন নাগিরক সুবিধা ভোগ করার অধিকার আছে আবার তাদের নাগরিক দায়িত্বও পালন করতে হবে। যারা অধিকার ভোগ করবে তাদের দায়িত্বও পালন করতে হবে। আপনারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ঘরবাড়ি শুধু না নিজের সামনের রাস্তাটাও যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, এই পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। রোববার (৬ মার্চ) দুপুরে ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ-১)’ শীর্ষক প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন কাজের উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৪৪ নং ওয়ার্ডের কাঁচকুড়া হাইস্কুল মাঠে যুক্ত ছিলেন। জাতীয় জীবনে মার্চ মাসের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই স্মৃতি নিয়েই আজ আমরা বেঁচে আছি এবং এগিয়েয যাচ্ছি। সেই চেতনা নিয়েই আমরা প্রেরণা পাচ্ছি দ্রুত বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসতে। অন্তত ২০২২ সালে এসে এইটুকু দাবি করতে পারি, আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। যে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে।’ টানা মেয়াদে সরকার পরিচালনায় দায়িত্ব দেয়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘তারা বারবার ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছেন বলেই সরকারের ধারাবাহিকতা ছিল বলেই আজকে উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে। আমরা চাচ্ছি, বাংলাদেশটাকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলতে। যাতে এদেশের প্রত্যেক নাগরিক তার নাগরিক সুবিধাটা ভোগ করতে পারে, উন্নত জীবন পেতে পারে।’ ঢাকা শহর একসময় ছিল ছোট একটা শহর এবং চারিদিকে নদীবিধৌত। খুব স্বাভাবিকভাবে একটা স্বাধীন দেশের রাজধানী হিসাবে এটির গুরুত্ব বেড়ে যায়, জনসংখ্যা বেড়ে যায়। তাছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের লক্ষ্যটা ছিল তার উন্নয়নের চিন্তাভাবনা ছিল, সেটা ছিল একেবারে তৃণমূলের মানুষ থেকে তাদের জীবনমান উন্নত করা। অর্থ্যাৎ ক্ষমতাটাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে যেন উন্নয়নটা আসে। কিন্তু ৭৫’র জাতির পিতাকে হত্যার পর সেটা করা হয়নি। যার ফলে ধীরে ধীরে ঢাকা অর্থ্যাৎ মানুষ রাজধানীমুখী হয়ে পড়ে কর্মসংস্থানের জন্য, জীবন-জীবিকার জন্য। যার জন্য চাপটাও বেশি আসে।’ আর তাছাড়া একটা বিপ্লবের পর একটা বিবর্তনও হয়। কিছু মানুষ খুব আর্থিক স্বচ্ছলতা পেয়ে যায়। কিছু মানুষ হয়ত একেবারে হারিয়ে যায়। সেই ক্ষেত্রে ঢাকা শহরের উপর একটা প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে জনসংখ্যার বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। এই শহরটা আসলে খুব একটা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেনি অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যততত্রভাবে যে যেটা পেরেছে গড়ে তুলেছে। যার ফলে ধীরে ধীরে এতো মানুষের চাপ, এটা যেন মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।’ যখন সিটি করপোরেশন করা হল একটা মাত্র সিটি করপোরেশন। অথছ জনসংখ্যা বিশাল। কাজেই একটা সিটি করপোরেশন দিয়ে এতো মানুষের সেবা দেয়া অসম্ভব ব্যাপার ছিল। কারণ এতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, এটা কখনো সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে উত্তর-দক্ষিণ দুইভাগে করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বহুদিন থকে বলছিলাম প্রকল্প নিতে হবে। প্রকল্প নিলেই তখন আমরা কাজ করতে পারব। এরইমধ্যে আমরা অনেকগুলো কাজ শুরু করেছি। রাস্তাঘাট করা, মেট্রোরেলের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে, তিনশ ফিটে দুপাশে একশ ফিট খালসহ রাস্তা হচ্ছে। র‌্যাপিড ট্রানজিটও করে যাচ্ছি ঠিকই। কিন্তু আমাদের যে ইউনিয়নগুলো ছিল সেগুলিকে ওয়ার্ডে উন্নীত করার পর সেখানকার মানুষের জীবনমান উন্নত করা এটা একান্তভাবে অপরিহার্য ছিল। কাজেই আজকের এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমি মনে করি যারা এসব এলাকায় বসবাস করেন তারা সকলে সুন্দর চমৎকার একটা জীবন পাবেন এবং নাগরিক সুবিধাগুলি তাদের ঘরের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের একটি কথা বলব যে, আসলে আমাদের অনেক বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আমি প্রত্যেকটা মানুষের কাছে আবেদন করব, এখানে যেহেতু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আছেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমরা দিয়েছি আমাদের সেনাবাহিনীর ওপর। আমি দেখেছি যত কঠিন কাজ হয় আমরা তাদেরকেই দায়িত্ব দেই এবং অত্যন্ত সুচারুভাবে তারা সেটি পালন করে এবং বাস্তবায়ন করে।’ এক সময়কার বিদ্যুৎ খাতের দুর্দশার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় বিদ্যুৎ মানুষ পেত না। কবে আসবে সেই আশায় বসে থাকত। আমি যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি মাত্র ১৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম। আজকে বিদ্যুতের জন্য বসে থাকতে হয় না, বিদ্যুৎটা পাচ্ছেন। এটা পাওয়ার সাথে যে অনুরোধটা আমি করব, এক এক কিলোওয়াট বা এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে কিন্তু অনেক বেশি টাকা খরচ হয়, সেখানে আমরা ব্যাপকহারে ভতুর্কি দিচ্ছি। বিদ্যুৎ সুবিধা সবাই ভোগ করবেন, ভতুর্কিটা আমরা দেব কোথা থেকে? এটা তো জনগণের টেক্সের টাকায় দিতে হচ্ছে। কাজেই যারা ব্যবহার করবেন উৎপাদনের খরচটা তো তাদের দিতে হবে। তবেই না আপনি সুবিধাটা ভোগ করতে পারবেন। তারপরও মানুষের জীবনমান যেন উন্নত হয়, সেজন্য ভতুর্কি দিয়ে যাচ্ছি।’ ‘এখানে আমার অনুরোধ থাকবে, বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ করতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। একই অবস্থা আসে পানির। পানির সরবরাহ তো ছিলই না বলতে গেলে। এক গাড়ি করে পানি কিনতে হতো ওয়াশা থেকে। দাম লেখা থাকত দেড়শ টাকা কিন্তু দিতে হত ১৫’শ টাকা। এখানেও একটা বিরাট খেলার ব্যাপার ছিল, দুর্নীতিও ছিল- বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে যে কয়টা ওয়াটা ট্টিটমেন্ট প্ল্যান্ট তার সবগুলি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তাই পানি ব্যবহারেও প্রত্যেক নাগরিককে সাশ্রয়ী ও অপচয় বন্ধ করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ আমরা যে পানি পরিশুদ্ধ করে দেই, সেটা দিয়ে তো সব কাজেই চলে। গাড়ি ধোঁয়া থেকে শুরু করে কনস্ট্রাকশনের কাজ থেকে শুরু করে সব করেন। কিন্তু এই পানি পরিশুদ্ধ করতে কত টাকা খরচ হয় সেই হিসাবটা একটু জেনে নেবেন? সেখানেও আমাদের ভতুর্কি দিতে হচ্ছে। সেখানে ভতুর্কি দেয়া কিন্তু ঠিক না। তাই বিল কমাতে পারেন, বিদ্যুৎের বিলও কমাতে পারেন, পানির বিলও কমাতে পারেন, গ্যাসের বিলও কমাতে পারেন, যদি একটু আপনি সচেতন হন, সাশ্রয়ী হন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে ঢাকা শহর সুবজ ছিল, গাছ ছিল। সেগুলো কিন্তু অনেক কমে গেছে। তাই আমার অনুরোধ থাকবে যা যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, আপনারা একটু বৃক্ষরোপণ করবেন। ছাদ বাগান করবেন। যেখানে পারেন, যাতে একটু সবুজ থাকে, পরিবেশটা ঠিক থাকে সেদিকে নজর দেবেন।’ ‘সব থেকে খারাপ কাজ যেটা হয়ে গেছে, সেটি হচ্ছে বক্স কালভার্ট। যেখানে উন্মুক্ত খাল ছিল এই খালটা রেখে দুপাশে রাস্তা করা যেত। বা পিলার দিয়ে তার ওপর দিয়ে এলিভেটেড রাস্তা করা যেত। কিন্তু বক্স কালভার্ট করার ফলে জলাবদ্ধতাও হয় আবার সেখানে ময়লাও জমে, আবার নানা ধরনের সমস্যাও সৃষ্টি হয়। আর অনেক খাল বেদখল হয়ে যায়, মানে খাল তো এসমাইলি সম্পত্তি যে যেখানে পারে ঘরবাড়ি তৈরি করে দখল করে নেয়, দোকানপাঠ করে নেয়। তাই সেটা উদ্ধার করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী। মুজিববর্ষের অঙ্গীকার একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ঢাকা শহরে বস্তিবাসী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, বেদে সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন উদ্যোগ করে তা বাস্তবায়ন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। কোনো নাগরিক কষ্টে থাকুক সেটা আমি চাই না। কারণ বস্তিতে একটা মানবেতর জীবনযাপন তারা করে। এটা একটা মানুষের জন্য বাস উপযোগী না বা সেই পরিবেশও থাকে না। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যও নষ্ট হয়। এরা আমাদের দেশের নাগরিক। তাদের সব সুযোগ-সুবিধা আমাদের দেখা দরকার। কাজেই মুজিববর্ষ শুধু আমরা উদযাপনের মধ্য দিয়ে না মুজিব বর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তার প্রত্যেকটা নাগরিক যেন অর্থবহ জীবন পায়, সুন্দর জীবন পায় সেটাই আমার লক্ষ্য। আর কিছু না। সেজন্য আমাদের সিদ্ধান্তই হচ্ছে আমরা তাদের জন্য ঘর করে দেব। কাঁচকুড়া হাইস্কুল মাঠ প্রান্তে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, পল্রী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রমুখ। সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর