আহীর ভৈরব রাগের আলাপে শুরু বৈশাখবরণ
১৪ এপ্রিল ২০১৮ ০৬:২২
প্রতীক আকবর ।।
আহীর ভৈরব রাতের চতুর্থ প্রহরের রাগ, সংগীত বোদ্ধারা এমনটাই বলেন। যে সময়টা সবার কাছে শেষ রাত্রি, সেই সময় এই রাগ ভালো জমে। আর রাত্রির চতুর্থ প্রহরটি দিনের শুরুর ভাগ।
সেই আহীর রাগ যখন বেজে উঠলো রমনার বটমূলে… দিনটি তখন শুরু হয়ে গেছে। দিন শুরু মানে বছরের শুরু। একটি নতুন বছরের আবাহনী সুর বাজলো আহীর ভৈরব রাগে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘অরুণকান্তি কে গো যোগী ভিখারি’ গানটি যারা শুনেছেন আহীর রাগের সাথে তারা পরিচিত।
ছায়ানটের আয়োজনে শিল্পী মর্তুজা কবির মুরাদ তার বাঁশির সুরে তোলেন এই রাগ। সুরের মুর্ছণা তাতে ছড়িয়ে পড়ে রমনার চারিপাশে।
‘আহীর’ শব্দের অর্থেই যে রয়ে গেছে ভোরের সম্পর্ক। আহীর মানে ‘গোয়ালা জাতি’। গোয়ালারা দিনের একদম শুরুর ভাগে গাভীর দুধ সংগ্রহ করতে বের হন। আহীর ভৈরব রাগটা সেই সময়ের প্রতিনিধি।
ছায়ানটের বর্ষবরণ সে তো কেবলই কতগুলো গান নয়, থাকে ঐতিহ্য, কৃষ্টি আর সংস্কৃতিকে তুলে ধরা। আর সে কারণেই নতুন বাংলা সনের প্রথম দিনের শুরুর সুর হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে আহীর ভৈরব রাগের আলাপ। যার মধ্য দিয়েই বলা চলে বাঙালির শুরু হলো নতুন সন ১৪২৫-এর আলোর যাত্রা।
দেশীয় ঐতিহ্যের শাশ্বত এই আয়োজনের এবারের বিষয় ‘বিশ্বায়নের বাস্তবতায় শিকড়ের সন্ধান’।
অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তুর বাস্তবতাকে সামনে রেখে ১৬টি একক গান, ১২টি সম্মেলক গান, ২টি আবৃত্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে ছায়ানটের বর্ষবরণের এবারের আয়োজন। যা শুরু হয় শনিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে।
আয়োজনে সম্মিলিতভাবে গান করেছে বড়দের দল ও ছোটদের দল। বড়দের দল সম্মিলিত গানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পূর্ব গগনভাগে দীপ্ত হইল সুপ্রভাত’, ‘ওই পোহাইল তিমিররাত্রি’, ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘শুভ্র সমুজ্জল হে চির-নির্মল’, সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন’, জালাল উদ্দীন খাঁ-এর ‘ও আমার দরদী আগে জানলে’ গানগুলো গেয়েছে।
ছোটদের কণ্ঠে উঠেছে কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রভাত বাণী তব বাজে’, ‘মেঘ বিহীন খর বৈশাখে’, ‘এলো এলো রে বৈশাখী ঝড়’, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘আজি নূতন রতনে’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাঁধন ছেঁড়ার সাধন হবে’ গানগুলো।
কছিম উদ্দিনের ‘ওরে আইল বৈশাখ নয়া সাজে’ গানটি দুই দল একসঙ্গে গেয়েছে। আবৃত্তি করা হয়েছে নির্মলেন্দু গুণের ‘পৃথিবীজোড়া গান’ ও হুমায়ূন আজাদের ‘শুভেচ্ছা’ কবিতা।
একক গানে গাওয়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, লালন শাহ্ ও শাহ্ আবদুল করিমের লেখা ও সুর করা গান।
অনুষ্ঠান শেষ হয় ছায়ানটের সভাপতি সন্জিদা খাতুনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শেষ হয় ছায়ানটের বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের ৫১তম আয়োজন।
এই উৎসবকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রমনা বটমূলের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়ে।
এর পাশপাশি নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আয়োজন করছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
“মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি” প্রতিপাদ্য ও মর্মবাণী ধারণ করে সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে চারুকলা অনুষদ থেকে বের করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। দুই বছর পর আবারও পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে যাচ্ছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
বাংলা একাডেমি চত্বরে বসবে বইমেলা, বৈশাখী মেলা। অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বেসরকারি টিভি চ্যানেল আই ও সুরের ধারা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজন করেছে হাজারো কণ্ঠে’ বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। মুত্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সকাল ৯টায় হবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
ছবি- আশীষ সেনগুপ্ত
সারাবাংলা/পিএ/এমআইএস
আরও পড়ুন..
আহীর ভৈরব রাগের আলাপে শুরু বৈশাখবরণ
মঙ্গল আলোকে বিরাজও সত্য সুন্দরও (ভিডিও স্টোরি)
মঙ্গল শোভাযাত্রার পথিকৃৎ ভার্স্কয শিল্পী শামীম
বেলজিয়ামে পহেলা বৈশাখ মাতাবেন পুতুল, রনি আর আশিক
বৈশাখের আগে নগর মাতিয়ে দিল চৈত্র সংক্রান্তি