মা কাজে গেলেই ২ হাত বাঁধা থাকে বৃষ্টির
৯ মার্চ ২০২২ ১১:২৩
নেত্রকোনা: জন্মের পর থেকে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে জ্বলছে শিশু জান্নাতুল বৃষ্টি (৮)। মানসিক রোগে আক্রান্ত সে। চিকিৎসা করিয়েও কোনো কাজ হয়নি। তবে আর্থিক অনটনের কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেয়ের উন্নত চিকিৎসা করতে পারছেন না বাবা শাহজাহান মিয়া। তাই বাধ্য হয়েই আদরের সন্তানের দু’হাত কাপড় দিয়ে ঘরের বারান্দার খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে সংসারের অন্যান্য কাজ করেন মা। দীর্ঘ সাত বছর ধরে এভাবেই বন্দিজীবন কাটছে তার।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরের দশাল এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া। পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন তিনি। পরিবারে তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছেন। ২০১৪ সালের ৬ জুন স্বাভাবিক জন্ম হয় বৃষ্টির।
জানা গেছে, একজন ধাত্রীর মাধ্যমে বৃষ্টির জন্ম হয়। জন্মের পর সাড়াশব্দ না থাকায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় ওই হাসপাতালেই মেয়ের চিকিৎসা করান শাহজাহান। দুই দিন পর নড়াচড়া করলে মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন তিনি। পরে এক বছর বয়স থেকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে বৃষ্টি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও বাড়তে থাকে। একা ছাড়লে নিজেই মাথায় চাপড়ায় ও হাতে কামড় দেয় সে। নিজের ইচ্ছা মতো যেখানে-সেখানে চলে যেতে চায়, অন্যদের মারধর করে। রাতে ঘুমায় না। ফলে দু’হাত বেঁধে রেখে সংসারের সব কাজ করেন তার মা।
গ্রামের কবিরাজ ও স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়েও কেনো লাভ হয়নি। পরবর্তীতে হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তারা উন্নত চিকিৎসার করাতে পরামর্শ দেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তা আর সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানা গেছে।
বৃষ্টির চিকিৎসা নিয়ে শাহজাহান মিয়া বলেন, আমি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। সারাদিন দৈনিক মজুরি হারে কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে কোনো রকম চলে যায়। আমার দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ছোট একটা ঘরে বসবাস করি। আমার মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাব, সেই সামর্থ্য আমার নাই। তাই মেয়েটাকে নিয়ে অনেক কষ্টে কোনো রকম দিন পার করছি। যদি সরকারিভাবে মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে আমার মেয়েটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারত।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব উল আহসান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি, সত্যিই তা হৃদয় বিদারক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে অতি দ্রুত ওই শিশুর সব রকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
সারাবাংলা/এনএস