র্যাব ‘হেফাজতে’ অসুস্থ হয়ে হত্যা মামলার আসামির মৃত্যু
৯ মার্চ ২০২২ ১৭:২১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আটকের পর র্যাবের ‘হেফাজতে’ অসুস্থ হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। র্যাব জানিয়েছে, হত্যা মামলার পরোয়ানাভুক্ত ওই আসামির হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তির পরিবার অবশ্য র্যাবের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ওই ব্যক্তিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবের সামনে থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয় র্যাব।
জানা গেছে, মৃত নজরুল ইসলাম বাবুলের (৬০) বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। নগরীর ও আর নিজাম রোডে তার বাসা। তিনি ঠিকাদার ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। একসময় তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের সহকারী পরিচালক এএসপি নুরুল আবছার সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়া থানায় ৯ বছর আগে দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি ছিলেন নজরুল। গত রাতে (মঙ্গলবার রাতে) তিনি স্ত্রীসহ শেভরনে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বের হওয়ার পর আমরা তার পরিচয় জানতে চাই। তিনি নাম-পরিচয় বলার পর আংকেল ডেকে জানতে চাই— তার নামে কোনো হত্যা মামলা আছে কি না। মামলা আছে স্বীকার করার পর জিজ্ঞাসা করি— আংকেল, আপনি কি কোর্টে হাজিরা দেন? তিনি জানান, নিয়মিত হাজিরা দেন না। তখন আমরা বলি, আমাদের সঙ্গে চলেন, কাগজপত্রগুলো একটু যাচাই-বাছাই করতে হবে।’
‘শেভরনের সামনে থেকে পতেঙ্গায় (র্যাব-৭ কার্যালয়) নেওয়ার পথে তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন। তার স্ত্রীও সঙ্গে ছিলেন। আমরা তাকে পতেঙ্গায় বেসরকারি হোপ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। উনি আগে থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। হার্টের ৯৫ শতাংশ ব্লক ছিল। উনার স্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। ডাক্তার দেবী শেঠীর তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন,’— বলেন এএসপি নুরুল আবছার।
র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা উনাকে (নজরুল) আটক-গ্রেফতার কিছুই করিনি। নিজেদের হেফাজতেও নিইনি। শুধুমাত্র পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিলাম। এর মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা উনার স্ত্রীর পাশে থেকে চিকিৎসায় মানবিক সহায়তা দিয়েছি। মৃত্যুর পর আমরা আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।’
মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কান্নার জন্য ভালোভাবে কথা বলতে পারেননি। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার মানুষটা আর নেই। তাকে দাফনটা করে নিই। তারপর বলব।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে উপস্থিত স্বজনরাও সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
র্যাব কর্মকর্তা এএসপি নুরুল আবছার জানিয়েছেন, নজরুলের পরিবারের সদস্যরা লাশের ময়নাতদন্ত করতেও রাজি ছিলেন না। পরে র্যাব কর্মকর্তাদের অনুরোধে ময়নাতদন্তে রাজি হন।
এদিকে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন বিশ্বাসের উপস্থিতিতে পুলিশ লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করে। মিল্টন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, মৃতের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অস্বাভাবিকতাও মেলেনি। হাসপাতালের নথিতে উল্লেখ আছে, রাত ১২টা ৫৩ মিনিটে নজরুল ইসলাম বাবুলকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর