কেন লাশ হলো ২ মাদরাসা ছাত্র উত্তর মেলেনি এখনো
৯ মার্চ ২০২২ ২০:১১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে পৃথক মাদরাসা থেকে দুই শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বোয়ালখালী উপজেলায় মাদরাসার অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীকে খুনের বিষয় নিশ্চিত হলেও পুলিশ এর কারণ এবং সুনির্দিষ্টভাবে জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। অন্যদিকে নগরীর পাঁচলাইশে মাদরাসার ভেতর থেকে ছাত্রের লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা পরও মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার পিলখানা এলাকায় ‘আলী বিন আবী তালিব’ মাদরাসার ভেতর থেকে এক ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়। আরমান হোসেন (১৪) নামে ওই ছাত্র নগরীর মুরাদপুর মির্জারপুল এলাকার আব্দুল হামিদ সড়কের সর্দার বাড়ির ছেলে। তার বাবা মো. আব্বাস সবজি ও মুরগির ব্যবসা করেন।
আরমানের বাবার অভিযোগ, মৃত্যুর একদিন আগে আরমান মাদরাসার এক শিক্ষক তাকে বেশি মারধর করে বলে জানিয়েছিল। পুলিশের ধারণা, মাদরাসার ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে।
ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় আব্বাস বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেন। পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান জানিয়েছেন, দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দায়ের করা এই মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৭ মার্চ বিকেল ৫টা থেকে পরদিন সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে কোনো এক সময়ে আরমানকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি/ব্যক্তিরা ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করেছে।
একমাত্র সন্তান আরমানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা আমেনা বেগম। ছেড়েছেন নাওয়া-খাওয়া। ছেলে ‘খুনের’ বিচার চেয়ে বুধবার বিকেলে মানববন্ধনেও দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
এ সময় আমেনা বলেন, ‘আমার ছেলেকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার ছেলে হত্যায় জড়িতদের বিচার চাই। হাতজোড় করে বলছি, প্রধানমন্ত্রী আমার ছেলে হত্যার বিচার করেন।’ এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
মাদরাসার অদূরেই পিলখানা সড়কে আরমানের হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন শুলকবহর এলাকার বাসিন্দারা। সেই মানববন্ধনে দাড়িয়ে এমন আর্তি জানান তার মা। পরে মাদরাসার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন তার স্বজনরা। পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়।
এদিকে, গত ৫ মার্চ বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নে চরণদ্বীপ দরবার শরীফ পরিচালিত আল্লামা শাহসূফি অছিয়র রহমান মাদরাসার ভেতর একটি ভবনের দোতলা থেকে এক ছাত্রের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত ইফতেখার মালিকুল মাশফি (৭) বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নের ফকিরাখালী গ্রামের প্রবাসী আব্দুল মালেকের ছেলে। সে মাদরাসার হেফজখানা বিভাগের কায়দা শাখার ছাত্র ছিল।
এ ঘটনায় মাশফির মামার দায়ের করা মামলায় তিন শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের মধ্যে জাফর আহমদ নামে এক শিক্ষককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বোয়ালখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, জাফরকে জিজ্ঞাসাবাদে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মাশফি হত্যার বিচার দাবিতে বুধবার (৯ মার্চ) বিকেলে বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। এতে বক্তব্য রাখেন বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র জহুরুল হক জহুর, কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্রলীগ নেতা এসএম কাজেম, আসাদ তালুকদার, হোসাইন মাহমুদ, সাজু খান, হাফিস মিয়াজি, সাদ্দাম হোসেন।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর