‘বাংলাদেশের কৃষি বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে’
১০ মার্চ ২০২২ ১৩:৫৩
ঢাকা: এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষায় সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রযুক্তি হস্তান্তরে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থার (এফএও) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩৬তম কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সদস্য দেশগুলোর প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবু ধাবি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই নিঃসন্দেহে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৩০ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ এখনও খাদ্যাভাবের শিকার। সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে তাদের জন্য সহজে খাবারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরে এই অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশগুলোর মধ্যে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা এ অঞ্চলের এফএও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে বায়োটেকনোলজি, ন্যানোটেকনোলজি এবং রোবটিক্সের মতো আধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তর ও জ্ঞান বিনিময় বাড়ানোর কথা বলেন।
তৃতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক কৃষিতে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন, তাই কৃষিতে অর্থায়ন ও সহায়তার জন্য বিশেষ তহবিল তৈরি করা যেতে পারে।
১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের ২৯তম অধিবেশনে দেওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম ভাষণকে উদ্ধৃত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আসুন আমরা একসাথে এমন একটি বিশ্ব তৈরি করি যা দারিদ্র্য, ক্ষুধা, যুদ্ধ এবং মানুষের দুর্ভোগ দূর করতে পারে এবং মানবতার কল্যাণের জন্য বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন করতে পারে।’
করোনাভাইরাস মহামারি অন্যান্য খাতের মত কৃষি খাতকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছিল, যা উৎপাদক ও ভোক্তা দুই পক্ষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। সময়োচিত এবং কার্যকর হস্তক্ষেপে এ খাত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। কৃষির যান্ত্রিকীকরণসহ বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যাতে বাধাহীনভাবে খাদ্য উৎপাদন এবং কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি দেখিয়েছে, এ ধরনের বিপর্যয়ের মুখে মানুষ কতটা অসহায়। আর মানবজাতি কীভাবে একসঙ্গে কাজ করে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে, সেটাও এ মহামারি দেখিয়েছে।
কৃষির উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া নানান উদ্যোগ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তাই এখন মান বৃদ্ধি এবং বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশে প্রথম বারের মত এফএও’র এই আঞ্চলিক সম্মেলনে ৪৩টি সদস্য রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী, এনজিও ও নাগরিক সমাজের ৯০০ প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্র আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক কিউ দোইয়ুং ও কৃষি সচিব সায়েদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/একেএম