Wednesday 09 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে উত্তপ্ত তেলের বাজার, বাড়ছে বিপিসির লোকসান

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ মার্চ ২০২২ ২৩:০০ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ ২৩:১৫

ঢাকা: ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারের অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েই চলেছে। গেল সপ্তাহে আরব গালফ মার্কেটে ব্যারেল প্রতি যে ডিজেল ১১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে, সপ্তাহ না ঘুরতেই তা ১৩৪ মার্কিন ডলারে ঠেকেছে। বাড়তি রয়েছে ফার্নেস অয়েল, অকটেনের দামও।

জ্বালানির এই বাড়তি দামের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশেও। ভোক্তা পর্যায়ে এখনো জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়নি। তবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকসানের বোঝা ভারি হচ্ছে প্রতিদিনই। এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হতে পারে— এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন নীতি নির্ধারকরা। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুচরা পর্যায়ে জ্বালানির দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়াবে। ফলে দাম বাড়ানো উচিত হবে না।

বিজ্ঞাপন

জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব পর্যায়ে বছরে প্রায় ৬০ লাখ টন জ্বালানির চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল, যা কিনে এনে দেশে পরিশোধন করা হয় দেশের একমাত্র রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। বাকি ডিজেল, অকটেন, পেট্রোলসহ বাকি ৪৫ টন পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করে থাকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। কুয়েত, মালয়েশিয়া, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের আটটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিপিসিকে এসব জ্বালানি সরবরাহ করে থাকে।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ৯২ ডলারের বেশি দাম উঠে গেলে বিপিসিকে লোকসান গুনতে হয়। ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের কারণে ওই ৯২ ডলারের গণ্ডি দুই সপ্তাহ আগেই পেরিয়েছে। ফলে আগে থেকে লোকসানে থাকা বিপিসির লোকসানের বোঝা আরও বেড়েছে। জানা যায়, আগে দৈনিক ১৫ কোটি টাকা জ্বালানি সরবরাহে লোকসান দিতে হতো বিপিসিকে। সেই লোকসান এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটিতে।

বিজ্ঞাপন

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে ‘সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তে থাকে জ্বালানির দাম বাড়তে থাকে। জানুয়ারির শুরুতে বিশ্ববাজারে অকটেনের দাম ছিলো ব্যারেল প্রতি ৯০ দশমিক ০৪ ডলার। মাসের শেষে তা বেড়ে ১০২ দশমিক ৭৩ ডলারে পৌঁছায়। ওই সময়ে ডিজেল বিক্রি হয়েছিল ব্যারেল প্রতি ৮৭ দশমিক ৯৫ ডলারে। মার্চের শুরুতে সেই দাম ঠেকেছে ১৩৪ ডলারে।

ইউরোপে তেলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে রাশিয়া। গ্যাসের ক্ষেত্রেও ইউরোপ অনেকটাই নির্ভরশীল রাশিয়ার ওপরে। আর বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় তেলের শতভাগই আমদানি করতে হয় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে। ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজার টালমাটাল হয়ে ওঠায় ভাবতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, বিশ্ববাজারে প্রায় সব ধরনের জ্বালানির দাম প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। এর প্রভাব পড়েছে বিপিসির সরবরাহে। এরই মধ্যে ডিজেলে প্রতি লিটারে ১৩ টাকা এবং অকটেনে লিটার প্রতি ৬ টাকা করে লোকসান দিতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে ডিজেলের দামের সঙ্গে আমদানি কর, বন্দর ব্যায়, কোম্পানি কমিশন, পরিবহন ব্যয়, অপারেশন ও হ্যান্ডলিং লসসহ অন্যান্য লোকসান মিলিয়ে ডিজেলের বিক্রয়মূল্য হিসাব করা হয়। বিপিসি এমনিতেই লোকসানে। আন্তজার্তিক বাজারে গত এক বছর ধরে জ্বালানির দাম ওঠানামার কারণে বিপিসির লোকসান দৈনিক ১৫ কোটি টাকায় ঠেকেছিল। গত কয়েকদিনে আরও চার কোটি বেড়ে এখন দৈনিক লোকসান ১৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

এ পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে খুচরা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন বিপিসির এই কর্মকর্তা। অন্যদিকে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা মজুত বাড়াতে মনোযোগ দিচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে ভোক্তা পর্যায়ে কোনোভাবে জ্বালানির দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, গত দুই বছর মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের স্বল্প আয়ের মানুষ আরও বেশি দরিদ্র হয়ে পড়েছে। কাজ হারিয়েছে লাখ লাখ মানুষ, যারা এখনো সে ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বাজারে সবজি থেকে শুরু করে সব পণ্যের দাম বাড়তি। সবশেষ জ্বালানির দাম বাড়ানোর প্রভাবই এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। এখন আবার জ্বালানিতে বাড়তি মূল্যের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হলে সেটি অবিচার হবে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম পরিকল্পনা থাকা দরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮৫ ডলারে থাকা অবস্থায় ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর দেশের বাজারে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেয় সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের কথা বলে সেবার দাম বাড়ানো হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব পর্যায়ের গণপরিবহনের ভাড়া সমন্বয় করতে হয়েছে। প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারে।

বিপিসির তথ্যমতে, বাজারে বর্তমানে ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা, পেট্রোল ৮৬ টাকায় বিক্রি করছে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানি। এখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের যে পরিস্থিতি, তাতে ছয় মাস না ঘুরতেই আবারও দাম বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং সরকারের কাছে এর অগ্রগতি তুলে ধরছি। জ্বালানি তেলের সরবরাহ যেন কোনোভাবে ব্যহত না হয়, সেদিকে আমরা খেয়াল রাখছি। তবে খুচরা পর্যায়ে জ্বালানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে এখনো চিন্তা করা হয়নি।

আরও পড়ুন-

জ্বালানি তেলের দাম ১৩ বছরে সর্বোচ্চ

জ্বালানির পর এবার উত্তপ্ত খাদ্যপণ্যের বাজার

রাশিয়া থেকে আমেরিকায় তেল আমদানি নিষিদ্ধ

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব জ্বালানি খাতে, বাড়তে পারে ভর্তুকি

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

জ্বালানি তেল জ্বালানি তেলের বাজার তেলের বাজার রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর