Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এশিয়ার বৃহত্তম সূর্যপুরী আম গাছ ঘিরে পর্যটন সম্ভাবনা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৮ মার্চ ২০২২ ০৯:৫১

ঠাকুরগাঁও: পাখির চোখে দেখলে মনে হবে আস্ত আম বাগান। প্রায় তিন বিঘা জুড়ে ছড়িয়ে আছে ২০টি শাখা, সঙ্গে অসংখ্য প্রশাখা। কিন্তু আদতে এটি একটিমাত্র আম গাছ! এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় এই সূর্যপুরি আম গাছটির অবস্থান ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী নয়াপাড়া মুন্ডমালা গ্রামে। প্রায় দুইশ বছরের পুরোনো এই আম গাছটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মনোযোগে রয়েছে অনেকদিন ধরেই। ইতিহাসের সাক্ষী এই আম গাছকে ঘিরেই ঠাকুরগাঁওয়ে পর্যটন সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয়রা।

দেশের উত্তরাঞ্চলের এই জেলার মানুষের প্রিয় আম সূর্যপুরী। সুগন্ধীযুক্ত এবং রসালো তো বটেই, খেতেও দারুণ সুস্বাদু। বালিয়াডাঙ্গীর সূর্যপুরী বোম্বাই জাতীয় লতানো বিশালাকৃতির আম গাছটির বিস্তৃতি প্রায় ৩ বিঘা জায়গাজুড়ে। গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ ফুট। মূল গাছের পরিধিও ৩৫ ফুটের কম নয়। মূল গাছের তিন দিকে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে ২০টি শাখা। বয়সের ভারে গাছের ডালপালাগুলো নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ। মৌসুমে সবুজ আমে টইটম্বুর থাকে গাছটি। আমগুলোর ওজনও হয় প্রতিটি ২০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম।

স্থানীয়রা জানায়, এই আম গাছের ইতিহাস অনেক পুরোনো। মাটি আঁকড়ে থাকা মোটা ডালপালাগুলো দেখে অনেকেই গাছটির বয়স অনুমান করতে চেষ্টা করেন। কেউ সঠিকভাবে গাছটির বয়স বলতে পারেন না। গাছটি কোন সময় লাগানো হয়েছে, তা সঠিক জানা নেই কারও। আমগাছটির আনুমানিক বয়স ধরা হয় ২০০ বছরেও বেশি।

দিনাজপুর থেকে আসা সফিকুল ইসলাম নামে এক দর্শনার্থী বলেন, অনেক দিনের আশা ছিল এই আম গাছটিকে দেখার। আজ সেই স্বপ্ন ও আশা পূরণ হলো। আসলে ছবিতে দেখে যতটা মনে করেছিলাম, তার থেকেও আম গাছটি অনেক বড় ও সুন্দর। এটি গৌরবের বিষয় যে এশিয়ার বৃহত্তম আম গাছটি আমাদের দেশে।

নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলা থেকে আম গাছটি দেখতে এসেছিলেন সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুবিনা ইসলাম। তিনি বলেন, গাছটি দেখে অনেক ভালো লাগল। তবে এখানে চারপাশে বেড়া বা প্রাচীর দিলে ভালো হতো। কারণ অনেকেই গাছের খুব গাছে চলে যাচ্ছে। এতে গাছের ক্ষতি হতে পারে।

গাছ দেখতে দর্শনার্থীদের এমন ভিড় বছরজুড়ে থাকলেও আশপাশে থাকা-খাওয়ার তেমন সুব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে তাদের মধ্যে আক্ষেপও দেখা গেল। স্থানীয়রাও এ ঘাটতির কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন।

গাছটি দেখে মুগ্ধ হয়ে লাবণী আক্তার রিয়া নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘গাছটি অনেক বড়। এখানকার পরিবেশটাও অনেক ভালো। এখানে থাকার ব্যবস্থা থাকলে আমি এখানে কয়েকটা দিন যেতাম।’

সাদেকুল ইসলাম নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘মানুষের মুখে শুনে অধীর আগ্রহ নিয়ে এখানে এসেছি। দেখে অনেক ভালো লেগেছে। এখানে যদি খাওয়ার বা থাকার হোটেল-রেস্টুরেন্ট থাকত, তাহলে আমাদের মতো অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের জন্য অনেক সুবিধা হতো।’

উত্তরাধিকার সূত্রে গাছটির বর্তমান মালিক নূর ইসলাম বলেন, গাছটির অনেক বয়স হলেও এখনও প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ মণ আম হয়। তা থেকে উপার্জন হয় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। দূর-দূরান্ত থেকে গাছটি দেখতে ছুটে আসেন শত শত মানুষ। তাদের থাকা-খাওয়ার সুযোগ থাকলে খুব ভালো হতো। কিন্তু সেটি তো ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, গাছটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। তবে পর্যটকদের সাময়িক বিশ্রামের সুবিধা ও খাবারের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ যদি রেস্টুরেন্ট বা রেস্টহাউজ করতে চায়, তাহলে সেটিকেও প্রাধান্য দেওয়া হবে।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বালিয়াডাঙ্গী পর্যন্ত সরাসরি বাস যোগাযোগ রয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী থেকে হরিণমারী নয়াপাড়া মুন্ডমালা গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। এই পথে যাওয়ার জন্য মিলবে ইজি বাইক, অটোরিকশাসহ তিন চাকার ভ্যান। আম গাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগবে ২০ মিনিটের মতো।

সারাবাংলা/টিআর

টপ নিউজ পর্যটনের সম্ভাবনা সূর্যপুরী আম গাছ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর