মহামারিতে বইমেলা— আশা জাগালেও পূরণ হয়নি প্রত্যাশা
১৮ মার্চ ২০২২ ২২:৪২
ঢাকা: গতবারের চেয়ে এবারের বইমেলার চিত্র ছিল অন্যরকম। কেবল স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসার তাগিদ ছাড়া আর কোনো শঙ্কা দানা বাঁধেনি পুরো মেলায়। শুরুতে মেলার সময়সীমা কম থাকার সিদ্ধান্ত হলেও পরে তা বাড়িয়ে করা হয় ১৭ মার্চ পর্যন্ত। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ কমে আসতে থাকায় এবার লকডাউন, শাটডাউন, কঠোর বিধি-নিষেধের মুখোমুখি হতে হয়নি লেখক-প্রকাশকদের। সবমিলিয়ে মেলাটি হয়ে ওঠে জমজমাট।
বাংলা একাডেমির হিসাব বলছে— গত বইমেলায় বিক্রি হয়েছিল ৩ কোটি টাকার বই। তবে এবার বিক্রির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৫২ কোটি টাকা। যা গত বছরের ১৭ গুণ বেশি। যদিও ২০২০ সালে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি টাকার বেশি।
প্রকাশকরা বলছেন, গত বছরের চেয়ে মেলায় বিক্রি বাড়ায় তা প্রকাশকদের জন্য ছিল স্বস্তির খবর। তবে এই বেচাকেনায় প্রকাশকদের আর্থিক লোকসান কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
মেলার বিষয়ে অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মেলায় বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। তবে তা করোনার আগের পর্যায়ে যায়নি। আশা করি, ২০২৩ সালের বইমেলা আমাদের লোকসান পূরণ করে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির বিরূপ সময়ে এবারের বইমেলা কিছুটা হলেও আশা জাগিয়েছে। প্রকাশকরা লাভের মুখ না দেখলেও এবার লোকসানে পড়েনি অন্তত সেটি বলা যায়।’
মেলার বিষয়ে ভাষাপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সোহেল বলেন, ‘এবারের মেলা আয়োজনের দিক থেকে পূর্ণতা পেয়েছিল। কিন্তু মেলায় পাঠকদের আনাগোনা তেমন ছিল না। পূর্ণ উৎসবেও এই অপূর্ণতা ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকাশকরা আগের মতই তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। আশা করি, আগামী বইমেলা এই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দেবে।’
দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণে বইমেলা শুরু হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে মেলার সময় বাড়ানোর কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় বাড়ানো হয় মেলার সময়সীমা।
সুবর্ণ প্রকাশনীর শাহরিন হক তিথি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার মেলার সময় বাড়ানোর কারণে প্রকাশকরা স্বস্তিতে ছিলেন। সময় বাড়ানো না হলে প্রকাশকরা আরও অনেক লোকসানের মুখে পড়তেন।’
ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বেচাকেনা ভালো হয়েছে। মেলার সময় বাড়ানোর কারণে আমরা খুশি হয়েছি। সময় না বাড়লে আমাদের প্রকাশনাশিল্পে আরও ধস নামত। মেলার সময় বাড়ানোর ফলে বই বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মেলায় পাঠকের বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। ক্রেতাদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। কোনো কোনো সময় ভিড় সামাল দিতে গিয়ে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে।’
মেলার সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গতবছরের তুলনায় এবার প্রায় ১৭ গুণ বেশি বিক্রি হয়েছে। যদিও তা আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম। এবারের বিক্রি বাড়ার বিষয়টি বেশ আশা জাগানিয়া।’
তিনি বলেন, ‘এবারের পুরো মেলায় বিক্রি হয়েছে ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই। তার মধ্যে বাংলা একাডেমিরই ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। প্রকাশকদের হিসাব অনুযায়ী গত বছর মেলায় তিন কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। সে অনুযায়ী এবার ১৭ গুণ বেশি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।’
সারাবাংলা/একে