‘প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে, এখন লক্ষ্য কেউ যেন গৃহহীন না থাকে’
২২ মার্চ ২০২২ ২৩:১৯
প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালিয়ে দিতে পারাকে সরকারের একটি বড় সাফল্য বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের কোনো মানুষ যেন গৃহহীন না থাকে, এখন সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি আমাদের জন্য একটি বড় সাফল্য যে আমরা প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালাতে সক্ষম হয়েছি। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে সরকার এরই মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে। এখন একটাই লক্ষ্য— দেশে কোনো মানুষ আর গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে বর্তমান সরকার সচেষ্ট।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হয়ে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।
সোমবার (২১ মার্চ) দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেন।
এ প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘদিন ধরে সরকার পরিচালনা করায় এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা এ ধরনের সাফল্যের আরেকটি কারণ।’
এসময় তিনি বারবার তার দলকে ভোট দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে দেশ পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান। জনগণের কাছে সরকারের অঙ্গীকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদেরও তিনি অভিনন্দন জানান।
বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আওয়ামী লীগ সরকারের বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুমতি প্রদানের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে মেঘনাঘাট ৪৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং হরিপুর ৩৬০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট বেসরকারি খাতে নির্মিত প্রথম পাওয়ার প্ল্যান্ট বলে জানান তিনি। বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এইএস (অ্যালাইড এনার্জি সিস্টেম) এই প্ল্যান্টগুলো স্থাপন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তার সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ আর সরকার গঠন করতে না পারায় সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা যায়নি। ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার গঠনের সময় দেশে মাত্র ১৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো। আমরা সরকার গঠন করে পাঁচ বছর কাটিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় সেই বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে হয়েছিল ৪ হাজার ৩শ মেগাওয়াট। কিন্তু পরবর্তী পাঁচ বছরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর বদলে কমিয়ে ফেলে। ২০০৯ সালে আবার যখন আমরা সরকার গঠন করি, তখন দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কমে ৩ হাজার ২শ মেগাওয়াটে নেমে এসেছিল।
বিদ্যুৎকে শিল্পায়নের চালিকাশক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেক চর এলাকায় নদী ও সাগরের তলদেশ দিয়ে যেমন সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। যেখানে গ্রিড লাইন নেই সেখানে সোলার প্যানেল দিয়ে যেমন বিদ্যুৎ দিয়েছি, তেমনি সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে মূল বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, যেন সেখানে শিল্পায়ন হতে পারে।
সন্দ্বীপের উদাহারণ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, সেখানে প্রথমে আমরা সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছি। এরপর সাবমেরিন কেবল দিয়েও বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। চর কুকরী মুকরী, রাঙ্গাবালীতেও আমরা সেভাবে বিদ্যুৎ দেওয়া শুরু করেছি।
দক্ষিণাঞ্চল অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বন্দর, সেনানিবাস, সড়ক ও মহাসড়ক ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের উন্নয়ন করেছে যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় এ অঞ্চলে সবাইকে বেশি করে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার এবং কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ তৈরির আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃতির প্রতিশোধ খুব কঠিন। প্রকৃতি কীভাবে এটা করে, তা আমি নিজের চোখেই দেখেছি বহুবার। তারপরও আমি বলব, মানুষের সুরক্ষার যে বিষয়, সেটি আমরা নিশ্চিত করেছি। গতকাল (সোমবার) আমি বলেছি, সবাই গাছ লাগাবেন। আমাদের কৃষক লীগের ওপর এই দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে। তাদের উদ্যোগে আষাঢ় মাসে সারাদেশে বৃক্ষরোপণ করা হয়।
পদ্মাসেতু চালু হয়ে গেলে এক সময়কার চরম দুর্দশাগ্রস্ত দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের জীবনমান আরও উন্নত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠক থেকে ১২টি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৪ হাজার ৬৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাসস।
সারাবাংলা/টিআর