Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাধীনতা দিবস নয়, পহেলা বৈশাখ থেকে চলবে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ মার্চ ২০২২ ১৭:২৪

ঢাকা: যাত্রী পরিবহনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকলেও স্বাধীনতা দিবসে চালু করা যাচ্ছে না বাংলাদেশ- ভারতের মধ্যে চলাচলের অপেক্ষায় থাকা ট্রেন পরিষেবা। রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতীয় হাইকমিশন ভিসা উন্মুক্ত না করায় এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, আসলে পহেলা বৈশাখে দুই দেশের মধ্যে চলাচল করা ট্রেন চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আর ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছেন, দুই দেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর অনুমতি দিলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে পর্যটন ভিসা চালু করে দেওয়া হবে।

বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। ভারতের অর্থায়নে রেল খাতে চলমান প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। বৈঠক শেষে তারা এসব কথা জানিয়েছেন।

এসময় সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, বর্তমানে সব ধরনের ভিসা শুধু বিমান পথে চালু রয়েছে। সড়কপথে যেহেতু বেশি সংখ্যক মানুষের যাতায়াত হয়ে থাকে, সেজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতামতের ওপরে সড়ক ও রেলপথের ভিসা চালু নির্ভর করছে। দুই দেশ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যেই ভিসা চালু করতে পারব।

এ প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, আমরা রেল চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। কিন্তু ভিসা তো চালু হয়নি, যে কারণে আমরা ভিসা চালুর অপেক্ষা করছি। যেহেতু স্বাধীনতা দিবসে চালু করা যায়ন, সেহেতু আমাদের পরিকল্পনা থাকবে আসছে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে দুই দেশের মধ্যে ট্রেন সার্ভিস চালু করার।

এদিকে কোলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করে জানা গেছে, সেখানেও ভিসা দেওয়া শুরু না হওয়ায় রেল সার্ভিস চালু করতে পারছে না ইন্ডিয়ান রেলওয়ে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলেই সেখান থেকে ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা দেওয়া শুরু করবেন।

মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমনের কারণে প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশ- ভারতের মধ্যে চলাচল করা ট্রেন মৈত্রী, বন্ধন ও মিতালী। দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচলের জন্য গত ২০ মার্চ রেলপথ মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ভারতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সড়ক ও বিমান পথে যাতায়াতের জন্য ভিসাপ্রাপ্তদের রেলপথে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া এবং ভবিষ্যতে ইস্যুকৃত ভিসায় রেলপথ অন্তর্ভুক্ত করে ভিসা ইস্যুর বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনকে চিঠি পাঠাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। আরও সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশ ভারত দুই দেশের কোভিড-১৯ প্রোটোকল পর্যালোচনা পূর্বক ট্রেন পরিচালনায় নিযুক্ত কর্মীদের এবং ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী যাত্রীদের চলাচলের বিষয়ে কর্ম পদ্ধতি নির্ধারনে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতের রেলওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা দিবসে অর্থাৎ ২৬ মার্চ থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে তিনটি রেল রয়েছে সেগুলো আবারও চলাচলের। কিন্তু ভারতীয় হাই কমিশন সড়ক পথে ভিসা প্রক্রিয়া চালু না করায় সময় পেছাতে হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেলপথ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে চিঠি পাঠিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশনে।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচলের তিনটি রুটে রয়েছে এরমধ্যে ঢাকা- কোলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা- কোলকাতা রুটে বন্ধন এক্সপ্রেস আগে থেকে চালু ছিল। গত বছরের ২৬ মার্চ ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে উদ্বোধন করা হয় মিতালী এক্সপ্রেস। যা উদ্বোধনের পর আর চালুর সুযোগ হয়নি।

এর আগে ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’। ওই যাত্রার উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর দুই দেশের মধ্যে এ ট্রেন যাত্রার সূচনা হয়েছিলো। আর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর খুলনা-কোলকাতা পথে ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ চলাচলের সূচনা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কোলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ থেকে এসকল ট্রেন বন্ধ রয়েছে। দুই বছর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় রেলওয়েকে ট্রেন চলাচল আবারও চালু করতে চিঠি দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশে ট্রেন চালুর বিষয়ে একমত জানিয়ে গত ১৪ মার্চ বাংলাদেশ রেলওয়ে চিঠি পাঠায় ভারত রেলওয়ে। এরপর থেকে শুরু হয় রেল চলাচলের প্রস্তুতি।

উল্লেখ্য, ঢাকা- কোলকাতা পথে চলাচল করা সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মৈত্রী এক্সপ্রেস সপ্তাহে পাঁচ দিন ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। মৈত্রির এসি কেবিনের ভাড়া প্রতি সিট ভ্রমণ কর ৫০০ টাকাসহ ৩৫০৫ টাকা। আর এসি চেয়ার ভ্রমণ করসহ ২৫০৫ টাকা। ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড় প্রযোজ্য হবে। তবে তা নির্ধারিত হবে পাসপোর্ট অনুযায়ী। আর খুলনা- ঢাকা রুটে সপ্তাহে দুইদিন চলে বন্ধন এক্সপ্রেস। এই ট্রেনে এক্সিকিউটিভ চেয়ার ও এসি চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। খুলনা-কোলকাতার এক্সিকিউটিভ চেয়ারের ভাড়া ভ্রমণ করসহ ২৫০৫ টাকা। এসি চেয়ার ভ্রমণ করসহ ১৫০৫ টাকা। আর ঢাকা- জলপাইগুড়ি পথে মিতালী এক্সপ্রেস উদ্বোধন হয়ে এখন চলাচলের অপেক্ষায়। মিতালী এক্সপ্রেসে ভ্রমণ করসহ এসি বার্থের ভাড়া ৪ হাজার ৯০৫ টাকা, এসি সিটে ৩ হাজার ৮০৫ টাকা এবং এসি চেয়ারের ভাড়া ২ হাজার ৭০৫ টাকা। আর পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ভাড়া হবে মূল ভাড়ার ৫০ শতাংশ।

সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ

টপ নিউজ বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘তুফান’ আসছে হিন্দি ভাষায়
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৯

সম্পর্কিত খবর