Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিস্তায় অবাধে বালু উত্তোলন, দেখেও দেখছে না প্রশাসন

ডি‌স্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট
২৯ মার্চ ২০২২ ০৮:১৭

লালমনিরহাট: হাতিবান্ধা উপজেলায় তিস্তা নদী থেকে ইজারা ছাড়াই অবাধে বালু উত্তোলন করছেন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। নদী থেকে বালু তোলার জন্য সরকারের অনুমতির নিয়ম থাকলেও প্রভাবশালী ওই মহল কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে, বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকাসহ আশপাশের ফসলি জমি।

জানা যায়, উপজেলার সিংগীমারী ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর উত্তর ধুবনী এলাকায় ইজারা ছাড়াই অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা আজিজারসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী হাওয়ায় স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগও করতে সাহস পাচ্ছেন না। দিনে দুপুরে প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন কাজ চললেও প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে।

বিজ্ঞাপন

যদিও বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা-৪ এর (খ) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্য সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে কমপক্ষে ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

স্থানীয়রা জানান, গত ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে নদী থেকে ট্রাক্টরের মাধ্যমে বালু তুলছে প্রভাবশালী মহলটি। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে অনেক ফসলি জমি ও বাড়িঘর ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে ওই এলাকার আবাদি বেশিরভাগ জমি হুমকিতে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে প্রতিদিন ট্রাক্টরে করে অবৈধ বালু পরিবহনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে হাজীর মোড় হতে ডিগিরহাটের চলাচলের একমাত্র পাকা সড়কটি। এর মধ্যেই ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ট্রাক্ট্রর চালক বলেন, ‘প্রতিদিন গাড়ি প্রতি ৫৫০ টাকা করে সাংবাদিক ও পুলিশের জন্য আমাদের কাছ থেকে আদায় করেন ইব্রাহীম ও লন্ড্রি আজিজার।’

কাকে এবং কিভাবে এই টাকা বণ্টন করা হয় এ প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ‘সেটা আজিজার ও ইব্রাহীম বলতে পারবেন। আমরা গত ১৫ দিন ধরে ইউপি চেয়ারম্যান দুলুর নবনির্মিত রাইস মিলে বালুগুলো দিচ্ছি।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আজিজার নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করলেও সাংবাদিক, পুলিশের নামে টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘নিউজ করে কি করবেন? এখানে আরও বড় বড় মিয়ারা জড়িত আছে। আপনাদের মতো সাংবাদিক আমার কিছুই করতে পারবে না। আপনাদের মত দুই-চারজন আমার পকেটেও আছে।’

হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অনেকবার ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছি। গাড়ি নিয়ে এসে কয়েকদিন থানায়ও রেখেছিলাম। গাড়ি ধরলেই তারা বলে, বালু মসজিদে দিচ্ছি, বালু মন্দিরে দিচ্ছি। আমাদের অভিযান চলমান আছে। তারপরও অবৈধ বালু উত্তোলন কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।’

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল আমিন বলেন, ‘অভিযান অব্যাহত আছে। এরপরও যদি অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হয়ে থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ‘নদী থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। অভিযোগ পেয়েছি স্থানীয় দুই-একজন চেয়ারম্যান বালু সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/এমও

তিস্তা প্রশাসন বালু উত্তোলন লালমনিরহাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর