দুর্নীতিবাজদের আড়াল করতেই দুদক থেকে চাকরিচ্যুত শরীফ: মেনন
২৮ মার্চ ২০২২ ২৩:২৭
ঢাকা: দুর্নীতিবাজদের আড়াল করতেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ ঘটনা তদন্তে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৮ মার্চ) জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এদিন বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের সপ্তদশ অধিবেশন শুরু হয়।
অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। কিন্তু আমাদের দেশে দুর্নীতি চরম চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে। লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন, তাতে সন্দেহ নেই। দুর্নীতি দমন ও অনুসন্ধানের জন্য দুর্নীতি দমন অধিদফতরকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে উন্নীত করা হয়েছে। সেই দুদক যখন সংবিধানবিরোধী কাজ করে অথবা দুর্নীতিকে আড়াল করার জন্য বা তার কার্যক্রমের মধ্যে কোনো দুর্নীতিবাজকে আড়াল করার জন্য যখন সাংবিধানের বিধানের বিরুদ্ধে যায়, তখন আমাদের উৎকণ্ঠা হয়।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, দুদকের উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে ৫৪-এর (ক) ধারায় চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি আইনসম্মত নয়। কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই তাকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করা হয়েছে। অথচ এই ৫৪ ধারাটি নিয়ে হাইকোর্টে রায়ে বলা হয়েছে, এটি সংবিধানবিরোধী। দুদক অবশ্য আপিল করেছে। কিন্তু যে বিষয়টি বিচারাধীন, সেই বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে তাকে বরখাস্ত করা হলো। এর পরিণামে দুদকের কর্মকর্তারা সারাদেশে মানববন্ধন ও অ্যাসোসিয়েশন করল। এতে দুদকের ভাবমূর্তি প্রচণ্ডভাবে ক্ষুণ্ণ হলো। কিন্তু দুদক এই ব্যাপারে ঘা করলো না।
মেনন বলেন, শরীফ উদ্দিনের চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য দরখাস্ত করলেন। দুদক সেটাও মানল না। তিনি গেলেন হাইকোর্টে। বিচারাধীন বিষয়ে কথা বলব না। কিন্তু যে কর্মকর্তাকে দুই দিন আগে অতিউত্তম কর্মচারী বলেছেন, কী কারণে তাকে এক কলমের খোঁচায় চাকরিচ্যুত করলেন? কারণ হলো— তিনি এমন কিছু বিষয়ে তদন্ত করছিলেন, যার মাধ্যমে কিছু বিষয় উঠে এসেছিল যা জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে শরীফ উদ্দিনের করা তদন্তের বিষয়টি তুলে ধরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এসব কারণে যদি তাকে বরখাস্ত করা হয়, তাহলে নিশ্চয় বরখাস্ত করার পেছনে শক্ত হাত রয়েছে। তাকে বরখাস্তের পরে বিষয়গুলোর পুনঃতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে দুদক। আমি জানতে চাই— আসলে কেন এটার পুনঃতদন্ত হবে, যেখানে মামলা হয়ে গেছে? কাউকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এটা কোন স্বার্থে?
আমার কথা হলো সংসদ জানতে চায় যেখানে মামলা হয়ে গেছে, মামলায় কাউকে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এখন কেন এটা পুনঃতদন্ত হবে, কোন স্বার্থে হঠাৎ করে এই পুনঃতদন্ত?— প্রশ্ন রাখেন মেনন।
জাতীয় সংসদকে এই বিষয়গুলো জানানো প্রয়োজন মন্তব্য করে রাশেদ খান মেনন বলেন, দুদক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারা যখন এই ধরনের অসাংবিধানিক, অনৈতিক কার্যক্রম করে তখন বিষয়টি সংসদের খতিয়ে দেখা দরকার। এ বিষয়ে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি।
মেনন আরও বলেন, এভাবে অন্যায় করলে দুদকের সাধারণ কর্মচারীরা কাজ করতে পারবে না। সংসদকে দায়িত্ব নিতে হবে দেশের দুর্নীতি দমনের জন্য।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
দুদকের উপসহকারী পরিচালক রাশেদ খান মেনন শরীফ উদ্দিন শরীফকে চাকরিচ্যুতি