৪১’র লিখিত ও ৪২’র নিয়োগ শেষ, ৪০’র ফল কবে?
২৯ মার্চ ২০২২ ২২:৩৭
ঢাকা: ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে ৪০তম সাধারণ বিসিএসের কার্যক্রম শুরু করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ২০১৯ সালের ৩ মে হয় প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এর পর সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ওই বিসিএস’র সব ধাপ এখনো সম্পন্নই করতে পারেনি কমিশন। এমনকি কবে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হবে সে বিষয়ে নেই কোনো স্বচ্ছ ধারণা! পিএসসির চেয়ারম্যান চান এপ্রিলে ফল প্রকাশ করতে। কিন্তু কমিশনের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, ইদের আগে সম্ভব নয়।
পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ৪০তম বিসিএস’র ফল এপ্রিলে প্রকাশের জন্য কাজ করছি। এই পরীক্ষার সবগুলো ধাপ করোনা মহামারির কারণে ব্যাহত হয়েছে। আমাদের কিছুই করার ছিল না। এরপরও কম সময়ে ফল প্রকাশের জন্য যতটুকু সম্ভব আমরা চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এপ্রিলের প্রথম দিকে ফল প্রকাশের সম্ভাবনা প্রবল।’ তিনি মনে করেন, কাজ যেভাবে এগুচ্ছে তাতে ফল প্রকাশে এর বেশি সময় প্রয়োজন হবে না।’
তবে পিএসসির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এপ্রিলেও ৪০ তম বিসিএস’র ফল প্রকাশ নিয়ে সন্দিহান। তারা মনে করছেন, ইদের পর ফল প্রকাশ করা হবে। এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফল প্রকাশের জন্য কমিশন কাজ করছে। তবে অনেক ধীর গতিতে। তাতে এপ্রিলে ফল প্রকাশ সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।’
তবে এই বক্তব্য সত্য নয় বলে জানান কমিশন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “ফল প্রকাশের জন্য আমরা ‘প্রায়’ প্রস্তুত। এখন শেষ মুহূর্তের দেখাশোনা চলছে। এটি যেহেতু চাকরিপ্রার্থীদের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত পরীক্ষা, তাই যেন কোনো ভুল না হয় সেদিকে কড়া নজর দেওয়া হচ্ছে।”
এছাড়া কমিশনের কেউ কেউ বলছেন, পরীক্ষার ফল প্রকাশের কাজ প্রায় শেষের পথে। তারা দ্রুততম সময়ে ফল প্রকাশের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, ৪০তম বিসিএস’র ফল প্রকাশে বিলম্বের কারণে চাকরপ্রার্থীরা বেশ হতাশ হয়ে পড়েছেন। কারণ ওই পরীক্ষার পর হওয়া ৪১তম’র লিখিত পরীক্ষা ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। আর ফল পেয়ে নিয়োগও পেয়ে গেছেন ৪২তম’র ‘বিশেষরা’। ২৯ মার্চ হয়ে গেছে এর দ্বিতীয় দফা নিয়োগও।
মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন এমন একজন পরীক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিসিএস’র ইতিহাসে আমরা সবচে দুর্ভাগা ব্যাচ। এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল। অথচ এর জন্যই আমাকে চার বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফল প্রকাশের পর গেজেট হতে আরও সময় চলে যাবে। হতাশ। এই পরীক্ষায় চাকরি না হলে কী করব বুঝতে পারছি না।’
৪০তম বিসিএস নিয়ে এই চাকরিপ্রার্থীর বক্তব্য মিথ্যা নয়। তার মতো অন্যরাও বলছেন একই কথা। আর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর আর কোনো বিসিএস’ই এতটা সময় খরচ করেনি কমিশন। অবশ্য ৪০ যখন শুরু হয় তখন মহামারির কোনো আশঙ্কা ছিল না পৃথিবীতে। ২০১৯ সালে প্রিলিমিনারিও হয়েছিল বেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই। এতে অংশ নিয়েছিলেন ৩ লাখ ২৭ হাজার পরীক্ষার্থী। আর আবেদন করেছিলেন ৪ লাখ ১২ হাজার ৫৩২ জন।
প্রিলির ফল প্রকাশ হয় ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই। পাস করেন ২০ হাজার ২৭৭ জন। পরে এদের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয় ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি। পরীক্ষা শেষে হতেই শুরু হয় করোনার তাণ্ডব। মার্চে লকডাউনের কারণে পরীক্ষার খাতা যাচাই প্রক্রিয়াও আটকে যায়। ফলে একবছর পর ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি ফল পায় শিক্ষার্থীরা। উত্তীর্ণ হন মাত্র ১০ হাজার ৯৬৪ জন চাকরিপ্রার্থী। এরপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আটকে যায় তাদের মৌখিক পরীক্ষা। সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আর তখন থেকেই শুরু হয়েছে ফল প্রকাশের প্রক্রিয়া।
৪০তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৯০৩ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দেবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে শিক্ষা ক্যাডারে। প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ২০০ জন, পুলিশের এএসপি পদে ৭২ জন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ২৫ জন, কর ক্যাডারে ২৪ জন, শুল্ক আবগারিতে ৩২ জন। এগুলোর বাইরেও রয়েছে সাড়ে সাতশ পদ।
সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম