Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩১ মার্চ ২০২২ ১৮:২৬

ঢাকা: দেশের সব মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায় সরকার সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সর্বমহলের মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায় আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিশেষ করে আমাদের নারী-শিশু বা এসিড ভিকটিম থেকে শুরু করে যারা নির্যাতিত তারা যাতে ন্যয়বিচারটা পায়, আমরা সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নবনির্মিত ১২ তলা ‘বিজয়-৭১’ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে যুক্ত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠন করে সেই মেয়াদে বিচার ও আইন বিভাগের উন্নয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরাই প্রথম সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কার্যকর করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলাম। বিচার বিভাগের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ, আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করা, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেই। একটি স্থায়ী আইন কমিশন গঠন করি। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করি।’

এছাড়াও জেলা জজের নেতৃত্বে আইন সহায়তা কমিটি গঠন, স্বতন্ত্র মেট্রোপলিটন সেশন আদালত স্থাপন এবং গ্রামীণ আদালত প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠাসহ সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স বিল্ডিং নির্মাণের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। টানা মেয়াদে সরকারের সময় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস স্পোর্টস কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়াম, জাজেস টাওয়ারসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের উঠে আসে তার বক্তব্যে।

বিজ্ঞাপন

করোনা মহামারির সময় বিচারপ্রার্থীদের জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেওয়ার প্রসঙ্গ ‍তুলে ধরেন এবং ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন-২০২০’ প্রণয়ন করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করে জনগণকে ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে সুযোগ দেওয়ার জন্য জনগণের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

বাংলায় রায় লেখার বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতি হওয়ার ফলে অন্তত যারা বিচার পায় তারা সঠিকভাবে জানতে পারে রায়ে কি বলা হলো।’ সুপ্রিম কোর্ট ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় অনেক টাকার সাশ্রয়ও করে দিয়েছে। আরও বেশি টাকার একটি প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে অনেক টাকা কাটছাঁট করে প্রজেক্ট যাতে ঠিকমতো হয় সে ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তাকেও ধন্যবাদ জানাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘হার্ড কপি রাখতে হবে, ডিজিটালাইজডও করতে হবে। রেকর্ড রুম করার জন্য অর্থসচিবকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। যাতে রেকর্ড রুম তৈরি হয়। পাশাপাশি ক্লায়েন্ট শেড সেটা নির্মাণের ব্যবস্থাও আমরা নেব।’ হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গণে একটি উন্নতমানের মসজিদ করে দেওয়ারও পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে বলেও অবহিত করেন সরকারপ্রধান। সেইসঙ্গে আইন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার জন্য একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিনা পয়সার আমরা ভ্যাকসিন কিনে দিচ্ছি। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ করছে না, কিন্তু আমরা করছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি। মানুষের চিকৎিসা সেবা মানুষের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। এ ধরনের বিভিন্ন কাজ আমাদের করতে হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ন্যায় বিচার পাক এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পর পর তিন একটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে। যেকারণে আমরা বাংলাদেশের অনেক উন্নতি করতে পেরেছি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এভাবেই আমাদের সামনের দিকে আরও এগিয়ে যেতে হবে।’

বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তোলার প্রত্যয় পুর্নব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করব এবং সেইসঙ্গে অর্থনৈতিকভাবেও আমরা আরও শক্তিশালী এবং স্বাবলম্বী হতে চাই। আমাদের যেন কারও কাছে হাত পেতে চলতে না হয়। আমরা যেন নিজেরাই নিজেদের উন্নয়নে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। বর্তমানে প্রায় ৯০ ভাগ উন্নয়ন পরিকল্পনা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারি। সেই যোগ্যতা আমরা অর্জন করেছি। তার বড় দৃষ্টান্ত হচ্ছে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বড় একটি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছি। এটা করার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে অনেক উজ্জ্বল হয়েছে।’

আইন ও বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্টদের সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সকলের সহযোগিতায় বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।’

‘বিজয় ৭১’ উদ্বোধন করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ ভবনে আমরা আরও বিচারক নিয়োগ দিতে পারব। প্রথম বার এনেক্স ভবনে আমরা ৪০টি কক্ষ করেছিলাম। সেখানে ৩৫টি আদালত বসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। এবারে আরও ৩২টি বসার সুযোগ হবে।’

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

ন্যায়বিচার প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর