পাকিস্তানে গণতন্ত্রের মৃত্যু
৪ এপ্রিল ২০২২ ১১:৪৯
[পাকিস্তানের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল হওয়ার পরের দিন দ্য ডনের সম্পাদকীয়, সারাবাংলার পাঠকদের জন্য অনুবাদ প্রকাশ করা হলো]
পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বারবার বলেছিলেন, তুরুপের তাস তারই হাতে। কিন্তু, রাজনৈতিক বোদ্ধা এবং সংবাদ মাধ্যম সেই ইশারা না বুঝেই, ইমরানের ভরাডুবির ব্যাপারে এক রকম নিশ্চিত ছিল। কেউ ভাবতে পারেনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায়িত রাজনৈতিক দলটি এভাবে গণতন্ত্র ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠবে।
পাকিস্তানের সংসদ নেতার অবজ্ঞায় সংসদীয় প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে, দেশ সাংবিধানিক সংকটের অন্ধকার অতল গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সব তাস নিজের হাতে রেখে খেলার পরিকল্পনা করেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে এক স্ব-ঘোষিত যোদ্ধার অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ দেখল বিশ্ব। ‘শেষ বল পর্যন্ত খেলার’ পরিবর্তে নিয়ম ভেঙে ইমরান সংবিধানের ওপর চরম আঘাত করেছেন। এখন সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, তিনি ফের সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মানবেন কি না?
পাকিস্তানের পার্লামেন্টে রোববার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। অনাস্থা প্রস্তাব সংক্রান্ত বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করেই ডেপুটি স্পিকার প্রস্তাবটি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন। পার্লামেন্ট অধিবেশনের সবকিছু যে সাজানো ছিল তা পরিষ্কার। বিরোধীদলগুলোর আনা অনাস্থা প্রস্তাব পার্লামেন্টের সামনে ভোটাভুটির জন্য তোলার আগেই নবনিযুক্ত আইনমন্ত্রী আপত্তি তোলেন। সংবিধানের পঞ্চম অনুচ্ছেদে উল্লেখিত রাষ্ট্রের প্রতি সব নাগরিকের অনুগত থাকার যে প্রতিশ্রুতি; অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে তা ভঙ্গ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী। পরে, সংবিধানের পঞ্চম অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে ওই অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে দেন ডেপুটি স্পিকার।
এদিকে, পার্লামেন্টে যখন এই ভোটাভুটি চলছিল; তখন ইমরান খান ছিলেন না। পূর্ব পরিকল্পিত এক টেলিভিশন বক্তৃতার মাধ্যমে এই অনাস্থা প্রস্তাব ব্যর্থ করে দেওয়ায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন তিনি। একইসঙ্গে, পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের জন্য তিনি প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।
সাংবিধানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পার্লামেন্টে চলমান থাকা অবস্থায় তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ করতে পারেন না। অথচ, ইমরানের অনুরোধ আমলে নিয়ে প্রেসিডেন্ট সঙ্গেসঙ্গে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন।
এর আগে, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজের আস্থাভাজনকে পাশ কাটিয়ে পারভেজ এলাহিকে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে তিনি নৈতিকতা বিবর্জিত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন ইমরান। তার সর্বশেষ পদক্ষেপ প্রমাণ করল নেতা হিসেবেও তিনি অচল।
এখন তিনি একজন প্রকৃত খেলোয়াড়ের মতো রাজনীতির খেলায় মেতে উঠতে পারেন। এই অনাস্থা প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে তার যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে তিনি বর্বরতার আশ্রয়ও নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই, পাকিস্তানে একটি সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে, প্রেসিডেন্টও ইমরানের প্রতি বিশ্বস্ততা দেখাতে গিয়ে প্রাজ্ঞ আচরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এখন অনাস্থার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে গড়িয়েছে। কিন্তু, অনেকেই মনে করছেন যেহেতু নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই, সমস্যার কোনো সমাধান আসবে না। বিরোধীদলগুলোর পক্ষ থেকে যে পরিবর্তন চাওয়া হচ্ছিল, তা অধরাই থেকে যাবে।
সারাবাংলা/একেএম