Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অবৈধ সম্পদ অর্জন: প্রদীপের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ এপ্রিল ২০২২ ১৮:১৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। একই মামলায় আসামি তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে আগেই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

সোমবার (৪ এপ্রিল) চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালতে প্রদীপের বিরুদ্ধে তিন জন সাক্ষ্য দেন। একই সাক্ষীরা তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের ওই মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন প্রদীপ কুমার দাশ। আদালতে সেই আবেদন শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ থাকায় দুই আসামির একইসঙ্গে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু সম্ভব হয়নি।

দুদকের কৌঁসুলি মাহমুদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাইকোর্ট প্রদীপের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। আদেশ পৌঁছার পর আজ (সোমবার) প্রদীপের বিরুদ্ধে আয়কর বিভাগের তিন কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী তাদের জেরাও করেছেন। একই মামলায় প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণও আসামি। এই তিন সাক্ষী তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তবে এখন একইসঙ্গে সাক্ষ্যগ্রহণে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। ৮ এপ্রিল উভয় আসামির বিরুদ্ধে আরেকদফা সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছেন আদালত।’

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর দুদকের মামলায় আসামি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেছিলেন। মামলায় প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা ‘ওসি প্রদীপ’ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে দুদক অভিযোগ করে। আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করার অভিযোগও আনা হয়।

বিজ্ঞাপন

তদন্তের পর গত ২৬ জুলাই দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারি পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

অভিযোগপত্রে প্রদীপের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩৫ লক্ষ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করে সেই সম্পদ স্ত্রীর নামে হস্তান্তর ও স্থানান্তরপূর্বক মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করা হয়। এছাড়া উভয়ের বিরুদ্ধে ৪৯ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকার অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখের তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে দুদক।

অভিযোগপত্রে চুমকি কারণের নামে নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটায় ২ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ টাকা দামের ছয়তলা বাড়ি, পাঁচলাইশ থানার পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা দামের জমি এবং কক্সবাজারের ঝিলংঝা মৌজায় ১২ লাখ ৫ হাজার ১৭৫ টাকার একটি ফ্ল্যাটের বিষয় উল্লেখ আছে।

সম্পদ বিবরণীতে চুমকি কারণ নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে সম্পদ অর্জনের তথ্য দিয়েছিলেন। তবে অভিযোগপত্রে মাছের ব্যবসা থেকে চুমকির আয়ের কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।

অভিযুক্ত প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডে তাদের নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার স্ত্রী চুমকি কারণ সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন। তবে প্রদীপের সম্পদ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে ‍চুমকি পলাতক আছেন।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এরপর টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ওই বছরের ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন প্রদীপ কুমার দাশ। ওই মামলায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি দেয়া রায়ে প্রদীপকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ

ওসি প্রদীপ কুমার দাশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর