রাজধানী জুড়ে গ্যাস সংকট, স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে আরও কয়েকদিন
৪ এপ্রিল ২০২২ ১৮:৩৫
ঢাকা: রমজানে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে গ্যাস সংকট। কোনো কোনো এলাকায় গ্যাস একেবারেই নেই, আবার যেসব এলাকায় আছে সেসব এলাকার বাসাবাড়িতে চাপ অনেক কম। রোজার প্রথম দিনে গ্যাস নিয়ে এমন ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। রোজার দ্বিতীয় দিনেও চলছে একই অবস্থা। চলমান এই পরিস্থিতি আরও দুই থেকে তিন দিন থাকবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বড় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম বিবিয়ানা। সেই গ্যাসক্ষেত্রের ছয়টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন সাময়িক বন্ধ রয়েছে। এতে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগানের সংকট দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকায়। চলমান সংকট কাটিয়ে গ্যাসের গতি স্বাভাবিক হতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, বিবিয়ানা থেকে গ্যাস উত্তোলনের এক পর্যায়ে শনিবার রাতে কূপ থেকে বালি উঠতে শুরু করে। যে কারণে গ্যাস উত্তোলন তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দিতে হয়। এতে ওই রাতে সাড়ে চারশ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট তৈরি হয়।
তিনি জানান, সাধারণত আবাসিকে ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়, বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ১৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে শনিবার রাত থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকটের খবর পাওয়া গেছে। রোববার প্রথম রমজানে এই সংকট রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর, আমিনবাজার, কাফরুল, আদাবর, রামপুরা, বনশ্রী, এদিকে মৌচাক, মগবাজার, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, জিগাতলা, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মতিঝিল, পুরান ঢাকার প্রায় সব এলাকায় কম বেশি গ্যাসের সংকট রয়েছে।
রাজধানীর মৌচাক এলাকার বাসিন্দা লুৎফুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, রোজার প্রথম দিনে ইফতারের সব আয়োজন করার পর দেখা গেলো চুলা জ্বলে না। গ্যাস নেই। আযানের কাছাকাছি সময়ে এসে ফল দিয়ে ইফতার করা হয়েছে। কি কারণে গ্যাস চলে গেলো সেটাও জানা যায়নি।
মিরপুরের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আফরিন জাহান (৪২) সারাবাংলাকে জানান, মতিঝিল থেকে জ্যাম ঠেলে বাসায় ফিরে দেখি গ্যাস নেই। বাইরে থেকে খাবার কিনে এসে ইফতার করতে হয়েছে। এর বাইরে অনেকেই গ্যাস সংকট নিয়ে ফেইসবুকে স্টাটাস দিয়েছেন।
সাংবাদিক নাজনীন মুন্নি প্রতিবেদন লেখার ২৩ ঘণ্টা আগে লিখেছেন— ‘কোথাও কি গ্যাস নাই??? ইফতার বানানো তো চুলায় গেলো?! প্রথমদিন দারুন সারপ্রাইজ।’ তিন ঘন্টা আগে আরেকটি স্টাটাসে লিখেছেন— ‘তীব্র জ্যামে বসে থাকতে থাকতে। গ্যাসের অভাবে খাবার তৈরি না করতে করতে। ভয়াবহ দামের আগুনে হাত পুড়ে যেতে যেতে.. ভবিষ্যতে আসলে কি হবে সেই চিন্তা করতে করতে টিপের চিন্তা মাথায় জায়গা পাচ্ছে না। এই জাতি কি আমাকে মেনে নিবে?’
আরেক সাংবাদিক ঝুমুর বারী লিখেছেন ‘গ্যাস নাই গতকাল থেকে। বিদ্যুতটাও গেল মাত্র। ইনডেকশন টাও এবার বেকার।’ এমন স্ট্যাটাস অনেককেই লিখতে দেখা গেছে।
এর আগে রোববার (৩ এপ্রিল) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণ কাজের জন্য গ্যাস সরবরাহে ঘাটতিজনিত কারণে কিছু কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বিঘ্ন ঘটছে। ফলে কোনো কোনো এলাকায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। এই অসুবিধার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রাহকদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ।
গ্যাস সংকটের বিষয়টি জানিয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নিজের ভেরিফাইড ফেইসবুকে রোববার লিখেছেন, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আজ বেশকিছু এলাকার গ্রাহকরা গ্যাস সংকটে পড়েছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ভোগান্তির জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
এদিকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকেও গ্যাস সংকটের কারণে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের জরুরি রক্ষনাবেক্ষন কাজের জন্য হ্রাসকৃত হারে গ্যাস সরবরাহের কারণে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস স্বল্পতার সৃষ্টি হতে পারে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কূপ মেরামত করতে কিছুটা সময় লাগবে। ফলে আরো কয়েকদিন কষ্ট সহ্য করতে হবে রাজধানীবাসীকে। এদিকে এলএনজির সংকট রয়েছে। জানা গেছে, আগামী ৮ এপ্রিল এলএনজির একটি কার্গো দেশে পৌঁছাবে। এটি পৌঁছালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ