চিকিৎসকদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পাল্টাতে চান মেডিকেলে দেশসেরা মীম
৫ এপ্রিল ২০২২ ২৩:২১
ঢাকা: ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৭৯ হাজার ৩৩৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হয়েছেন সুমাইয়া মোসলেম মীম। খুলনা বিভাগের ডুমুরিয়া উপজেলার মেয়ে মিম খুলনার সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এমন ফলে ভীষণ উচ্ছ্বসিত মীম ও তার পরিবার। এখন মিমের লক্ষ্য, দক্ষ একজন চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলবেন নিজেকে। সমাজে চিকিৎসকদের নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, সেটিকে বদলে দেবেন তিনি।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, সুমাইয়া মীম লিখিত পরীক্ষায় পেয়েছেন ৯২ দশমিক ৫ নম্বর পেয়েছেন। তার মোট নম্বর ২৯২ দশমিক ৫।
গ্রামেই বেড়ে ওঠা সুমাইয়া মোসলেম মীমের বাবা খুলনার ডুমুরিয়া কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন সরদার। মীমের মা খাদিজা খাতুন কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট।
ফলাফল প্রকাশের পরে দেশসেরা হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পরে উচ্ছ্বসিত অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন সরদারের পরিবার। সারাবাংলা ডটনেটের পক্ষ থেকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান নিজেদের উচ্ছ্বাস ও সন্তুষ্টির কথা। আরও জানান, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে মীমের বন্ধু-বান্ধবদের পরিবার এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাও অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
আরও পড়ুন- মেডিকেলে ১১ হাজার আসনের বিপরীতে উত্তীর্ণ ৭৯৩৩৯ [তালিকাসহ]
অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন বলেন, গ্রাম থেকে লেখাপড়া করে এত ভালো ফলাফল সম্ভব— এতটা ভাবনাতেও ছিল না। চাকরির জন্য মীমের মা’কে প্রতিদিন কেশবপুরে যাওয়া-আসা করতে হয়। বাসায় ফিরেও রাত জেগে মেয়ের পাশে বসে থাকত। মীমও নিজের সর্বোচ্চটাই চেষ্টা করত। এতদিনের পরিশ্রম শেষে আজ যে ফলাফল পেলাম, তাতে অনেক ভালো লাগছে। ওদের আনন্দ দেখে আমার আরও বেশি ভালো লাগছে। আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া।
মোসলেম উদ্দিন জানান, সুমাইয়া মোসলেম মীম খুলনার ডুমুরিয়া বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ভর্তি হন খুলনা সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। দুই পরীক্ষাতেই মীমের অর্জন ছিল জিপিএ-৫।
অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন বলেন, আজ মীমের কোচিং সেন্টার ডিএমসি স্কলার মেডিকেলে গেলাম। সেখানে শিক্ষকসহ অন্যান্য সহপাঠীদের অভিভাবকরাও অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন আমাদের। খুবই ভালো লাগছে। এখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, যেন ভবিষ্যতেও মীম এই সফলতা ধরে রাখতে পারে।
মীমের মা খাদিজা খাতুন বলেন, আমার মেয়ে বড় হয়ে চিকিৎসক হবে— এমন একটা স্বপ্নই ছিল আমার। সেই চাওয়া পূরণের প্রাথমিক ধাপ আজ পার হলো। কিন্তু মেয়ে যে ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে প্রথম হবে— এটা ভাবতেই পারিনি। মীমের এমন ফলাফলে খুবই আনন্দিত আমরা সবাই।
যার ফলাফল নিয়ে এত উচ্ছ্বাস, যিনি ফলপ্রকাশের পর থেকেই অভিনন্দনে ভাসছেন, সেই সুমাইয়া মীমের সঙ্গেও কথা হয় এই প্রতিবেদকের। মীম জানালেন, সুনির্দিষ্টভাবে চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্য তার ছিল না। তবে পরিবারের চাওয়া পূরণে সচেষ্ট ছিলেন তিনি।
মীম বলেন, যদি আমাকে কেউ জিজ্ঞাসা করে আমার ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে ছিল কি না, আমি বলব— না, তেমন কোনো লক্ষ্য বা ইচ্ছা ছিল না। তবে আম্মুর খুবই ইচ্ছা ছিল যে আমি ডাক্তার হই, মেডিকেলে ভর্তির জন্য পড়ালেখা করি। আমি সেই জায়গা থেকে চেষ্টা করে গেছি।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে প্রত্যাশা কী ছিল— এমন প্রশ্নের জবাবে মীমের উত্তর, আমি যে সবার চেয়ে অনেক বেশি ভালো শিক্ষার্থী, তা নয়। তবে আত্মবিশ্বাস ছিল। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। পরীক্ষা দেওয়ার পরও মনে হয়েছিল, চান্স পাব। কিন্তু দেশসেরা হয়ে যাব, এটা কখনোই ভাবিনি। এজন্য আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া জানাই।
নিজের এমন অর্জনের পেছনে মা-বাবার বড় ভূমিকা দেখছেন মীম। বলেন, আমার ফলাফলের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে আমার মা ও বাবা। মা প্রতিদিন কেশবপুরে যাওয়া-আসা করেন। এটা খুবই কষ্টের। এরপরও তিনি আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আজ ফলাফল পাওয়ার পর মা-বাবার মুখে যে হাসি দেখতে পাচ্ছি, এর চেয়ে বেশি তৃপ্তির আর কিছু হয় না।
সুমাইয়া মীম বলেন, মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি, এটি অবশ্যই ভালো লাগার একটি বিষয়। দেশসেরা হিসেবে সুযোগ পাওয়ায় আরও বেশি ভালো লাগছে। আমি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভালো একজন চিকিৎসক হতে চাই। তবে সবার আগে আমি একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে নিজেকে সমাজের সবার পাশে দেখতে চাই।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনেক শাখার মধ্যে কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে মীম বলেন, কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে চাই তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে আমাদের সমাজে চিকিৎসকদের নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা কাজ করে। সমাজে অনেকেই চিকিৎসকদের কসাই ডেকে থাকেন। আমি সেই ধারণা ভাঙতে চাই। সমাজের ও দেশের মানুষের জন্য চিকিৎসক তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন— এটাই আমি সবাইকে দেখাতে চাই।
ভবিষ্যতে যারা চিকিৎসক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে চান, তাদের উদ্দেশে মীম বলেন, অনেকেই ভাবে— পড়ালেখা মানেই সবকিছু মুখস্থ করতে হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সবকিছু মুখস্থ করে সফল হওয়া যায় না। কারণ আজকের মুখস্থ বিদ্যা কালই ভুলে যেতে পারেন যে কেউ। তাই বুঝেশুনে পড়ালেখা করতে হবে। যা পড়ছি তা যদি সঠিকভাবে না বুঝতে পারি, তাহলে মুখস্থ করেও বিশেষ লাভ নেই। সেটা বুঝেশুনে পড়লে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় পরীক্ষায়।
লক্ষ্য পূরণ করে ভবিষ্যতে যেন দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে পারেন, সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়াও চান সুমাইয়া মোসলেম মীম।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
এমবিবিএস প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সুমাইয়া মোসলেম মীম