Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরকারি উচ্ছেদ অভিযানে হামলা, আহত ৩

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৬ এপ্রিল ২০২২ ২৩:১১

নোয়াখালী: জেলার কোম্পানীগঞ্জে ভুয়া ভূমিহীন সাজিয়ে ৬০০ একর সরকারি খাস জমি দখল করে অবৈধ ঘর নির্মাণে বাধা দেওয়ায় ভূমি কার্যালয়ের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে বেদখলকারীরা। এ ঘটনায় ৩ জন আহত হয়েছে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গুরুতর আহত এক জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

আহত দের মধ্যে রয়েছেন: আব্দুল জব্বর (৩৩) তিনি উপজেলার বামনী তফসিল অফিসের অফিস সহায়ক, বাংলা বাজার তফসিল অফিসের তহসিলদার জয়নাল (৫০) ও আবদুল্ল্যাহ আল মামুন (৩৫)।

বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের মুছাপুর ক্লোজারের মুখে জেগে উঠা নতুন চরে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুছাপুর ইউনিয়নের ক্ষমতাসীন দলের এক জনপ্রতিনিধির যোগসাজশে স্থানীয় মেম্বার আলী আজগর জাহাঙ্গীর ও তার লোকজন এ সরকারি খাস জমি দখল করেছে। এরই মধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক মাটির ভিটা বানানো হয়েছে এবং দুই ধাপে ৩০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এক পর্যায়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.আল আমিন অভিযান চালিয়ে প্রথম ধাপে নির্মাণ করা ঘরগুলো উচ্ছেদ করে দেয়। এরপর আবার ভূমিদস্যুরা বুধবার (৬ এপ্রিল) ভোর রাতের দিকে পুনরায় ওই খাস জায়গার উপর ১২টি ঘর নির্মাণ করে।

এবারও খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে ফের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ভূমি অফিসের লোকজন পুলিশের উপস্থিতিতে অবৈধ ঘর গুলো উচ্ছেদ করতে গেলে একাধিক ভূমিদস্যুর ইঙ্গিতে বেদখলদাকারীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে ভূমি অফিসের ৩ কর্মকর্তা আহত হন। পরে পুলিশের বাধার মুখে বেদখলকারীরা পিছু হটে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.সাজ্জাদ রোমন বলেন, অবৈধ ভূমি উচ্ছেদে গেলে তহসিলদার আহত হয়েছে। পরে পুলিশ ধাওয়া দিলে বেদখলকারীরা পালিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামলা দিলে তারা মামলা আমলে নেবেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী এসিল্যান্ডের বরাতে বলেন, ভূমি অফিসের একজন স্টাফকে গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। আজকে কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বাকীটা আগামীকাল করা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহনও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ডাকাতিয়া নদীর ওপর বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর ফলে বেড়িবাঁধের মুখে ডাকাতিয়া নদী থেকে আনুমানিক ৭০০ একর নতুন চর জেগে উঠে। এক সময় বনবিভাগ ওই জায়গায় চারাগাছ রোপণ করে। নতুন জেগে উঠা চরে সেতুমন্ত্রী পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার ঘোষণা দিলে বনবিভাগ ২০১৮সালে তাদের চারা গাছ সরিয়ে নেয়।

কিন্তু, এখন স্থানীয় ইউপি সদস্য দুই শতাধিকের উপরে ভুয়া ভূমিহীন সাজিয়ে ৬০০ একর আবাদযোগ্য ও অনাবাদি খাস জমি দখল করে সেখানে বসতঘর করার জন্য মাটির ভিটা বানাচ্ছে। প্রত্যেকটি ভিটার পরিমাণ হবে এক একর। অভিযোগ রয়েছে এর জন্য ভিটা প্রতি নেওয়া হচ্ছে এক লাখ টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত।

মুছাপুর ক্লোজারের সামনে জেগে উঠা চরে পাঁচটি স্কেবেটারে মাটি কেটে ভিটা বাধার কাজ শেষ করেছে। এখন রাতের অন্ধকারে অবৈধ ঘর বানানো হচ্ছে। এতে তদারকি চালাচ্ছে প্রায় শতাধিক মানুষ। গণমাধ্যমকর্মীদের সেখানে যাওয়া নিষেধ বলেও জানান তারা।

চর দরবেশ এলাকার আবদুস সোবহানের ছেলে কালাম খাস জায়গায় মাটি কাটার কাজ করছে। কালাম জানান, মুছাপুরের চরদরবেশ গ্রামের স্থানীয় জনগণ এখানে ভিটা ভরাটের কাজ করছে। আনুমানিক ৩০০ থেকে ৪০০ পরিবার হবে। এ জায়গার মধ্যে বাড়ি হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার জাহাঙ্গীর জানেন। মেম্বারের ভাই জালাল সবাইকে বসিয়ে দিচ্ছে। কাউকে টাকা দিতে হচ্ছে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিজেদের ভিটা নিজেরা বেঁধে নিচ্ছি। যা চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ যায়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর মেম্বার আলী আজগর জাহাঙ্গীর অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে উপজেলা থেকে অথবা বোর্ড অফিস থেকে কোন নির্দেশ আসলে আমি সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে এর প্রতিবাদ করবেন। বন্ধ করব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা খাস জায়গা, না ব্যক্তি মালিকানার জায়গা এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমি জানি এটা নদী ছিল তারপর চর জাগে। এরপর কাউকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে কি না এ বিষয়ে জানা নেই। কাউকে বন্দোবস্ত দিলে সে পেয়েছে। আর খাস থাকলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।

তিনি আরও বলেন, তার দুই ভাই এবং তিনি খাস জায়গা দখলের সঙ্গে জড়িত নন।

সারাবাংলা/একেএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর