Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নারীকে অংশীদার না করে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৭ এপ্রিল ২০২২ ২১:১২

ঢাকা: নারীকে অংশীদার করা ছাড়া জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব না। এ জন্য নারীকে মূলধারায় রাখতে সহায়ক কর্মসূচি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ কথা বলেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সেগুনবাগিচায় অবস্থিত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মূল ভবনের আনোয়ারা বেগম- মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি: ভবিষ্যতের রূপরেখা প্রণয়নে নারীর অংশীদারিত্বের অন্তর্ভুক্তি’ বিষয়ক প্রাক বাজেট আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ মান্নান।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেম এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম.এম. আকাশ, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস এর বিশেষ প্রতিনিধি মুনিমা সুলতানা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেন বলেন, ‘যে কোনো উন্নয়ন কর্মসূচির লক্ষ্য সামাজিক উন্নয়ন কতটা হচ্ছে তা দেখা। বর্তমান সময়ে অনেক অগ্রগতি হলেও তা সব মানুষের কাছে যাচ্ছে না। কেননা সুশাসন ও আইন প্রয়োগের অভাবে ক্ষমতার সিন্ডিকেটের কাছে এই অগ্রগতি জিম্মি হয়ে আছে। পাশাপাশি স্বাধীনতারবিরোধী শক্তিও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী। তিনি নারীর নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা, সেক্স ডিসএগ্রিগেটেড ডাটা এবং নারীর জন্য বিনিয়োগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থাপন করেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৫ হলেও এটি মূল চিত্র নয়। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ হওয়ায় আমরা এগিয়ে আছি। কিন্তু শিক্ষা, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ও তথ্য প্রাপ্তির অধিকারে পিছিয়ে আছি।’

এ সময় তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫০ বছরের অর্জন এক ধরনের উদযাপন। এ সময় শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, ভূমিতে ডিজিটাইজেশন পদ্ধতি হয়েছে। তবে অবৈতনিক খাতে নারীর উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে।’

সামাজিক অগ্রসরকে ত্বরান্নিত করতে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির সুপারিশ করেন। সম্পদ সম্পত্তিতে নারীর মালিকানা নিশ্চিতের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করে, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, বিবিএস এর উদ্যোগে মেটা ডিসএগ্রিগেটেড ডাটার সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে জেন্ডার ইকুয়ালিটি প্রতিষ্ঠার জন্য নিজ দেশের শক্তি ও সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে নানা বাধা অতিক্রম করে সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নে, কোটা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। যে কোনো প্রকল্প গ্রহণের সময় সরকার নারীদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। কিছু বাত্যয় হচ্ছে। কিছুটা বৈষম্যও অবশ্যই আছে। সরকার দারিদ্র্য দূর করতে না পারলেও উপশম করেছে। জনগণের সমর্থনে তিনি টানা ১৩ বছর দায়িত্ব পালন করছেন এটি তার উন্নয়নের উদাহারণ।’

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার উত্তরণের এই সময়কে স্থিতিশীল রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ বলেন, ‘নারীবান্ধব নানা কর্মসূচি সরকার থেকে নেওয়া হলেও সুবিধাভোগীদের সচেতনতার অভাবে অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয় না।’

এ সময় তিনি মহিলা পরিষদকে নারীদের সচেতন করতে কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানান।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহান বলেন, ‘দৃষ্টিসীমাকে প্রসারিত করতে হবে, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে টেকসই উন্নত দেশ হিসেবে ভাবতে হবে, নারীর অংশদারিত্ব নিশ্চিত, নারীবান্ধব নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়নে নারী ইস্যুকে গুরুত্ব দেওয়া, যে কোনো নীতিমালা প্রণয়নে সঠিক বিভাজিত উপাত্ত সংগ্রহ করা, কেবল বাজেট নয় সামষ্টিক অথনৈতিক নীতিমালা প্রণয়নের কেন্দ্রে নারীকে অন্তর্ভুক্ত করা, কর্ম নিয়োজন ও আয়ে নারীর অংশগ্রহণ বিস্তৃত করা ও এ জন্য বাজেট বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষায় নারীকে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে ও প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি বাজেট বরাদ্দ ও নীতমালা প্রণয়নে বিভিন্ন প্রান্তিক ও দরিদ্র নারীদের চাহিদা ও আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন থাকতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম.এম. আকাশ জাতীয় অর্থনীতিকে টেকসই করতে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ না করে কৃষিতে ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেন।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং সমাজে বিদ্যমান সকল বৈষম্য দূর করতে হবে।’

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা অর্জনে বাংলাদেশ ঠিকপথে এগোচ্ছে কিনা পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।’

তিনি রাজনীতি, সামাজিক ও অর্থনীতিতে নারীর অংশীদারিত্ব এবং জবাবদিহিতামূলক রাজনীতি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন এবং জেন্ডার বিভাজিত তথ্য ও পরিসংখ্যান হালনাগাদ করার সুপারিশ করেন।

দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস এর বিশেষ প্রতিনিধি মুনিমা সুলতানা বলেন, ‘জেন্ডার বাজেটের আলোকে নারীবান্ধব বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা যথেষ্ট নয়। নারীদের কাজের যথাযথ স্বীকৃতি নাই এবং শ্রমখাতে নারীর প্রতি এখনও অনেক বৈষম্য বিদ্যমান।’

সভায় স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এদেশের লড়াকু মানুষেরা নানা প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলেছে। নারীরা জাতীয় অর্থনীতির হাল ধরেছেন। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে অনেক সম্ভাবনা সৃষ্টি হলেও নানা চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। সে জন্য অধিকার ও মর্যাদার ভিত্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্বের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’

আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক হান্নানা বেগম, রেখা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, মাসুদা রেহানা বেগম, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী, ঢাকা মহানগরের নেতৃবৃন্দ একশন এইড নারীপক্ষ, গণস্বাক্ষরতা অভিযান, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি, এসিড সারভাইভারস, সানেমের প্রতিনিধি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

ইস্যু নারী উন্নয়ন প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর