দেশে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি ৫ জনে ১ জন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন
১০ এপ্রিল ২০২২ ০৯:১২
ঢাকা: বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের মাঝে ২১ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনে ভুগছে। এর মাঝে আক্রান্ত পুরুষদের দুই তৃতীয়াংশ বা ৬৭ শতাংশ পুরুষ জানেনই না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। একইভাবে প্রায় ৫১ শতাংশ নারী তাদের উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভোগার বিষয়ে জানেনই না। এই উচ্চ রক্তচাপ দেশে হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
শনিবার (৯ এপ্রিল) ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে উল্লিখিত অভিমত দেন বিশেষজ্ঞরা। ওয়েবিনারের আয়োজন করে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা)।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শামীম জোয়ার্দ্দার ।
তিনি বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক ২১ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। শুধু এটাই কিন্তু তাদের রোগ নয়, এছাড়াও তাদের আরও অন্যান্য অনেক রোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে এ বিশাল সংখ্যক মানুষের চিকিৎসা সেবা কিন্তু সরকারের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। সুতরাং এ জায়গাটিতে আমাদের সচেতন হতে হবে। একইসঙ্গে হৃদরোগ ঝুঁকি তথা অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে দেশে উচ্চ রক্তচাপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখন থেকেই সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন একজন মানুষের ৫ গ্রাম লবণ খাওয়া দরকার। তবে দেখা যায় লবণ গ্রহণের মাত্রা কয়েক গুণ বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ দৈনিক ৯ থেকে ১১ গ্রাম লবণ ব্যবহার করেন। শুধু ভাত-তরকারিতে নয়, না জেনে বাইরের খাবার থেকেও তাদের শরীরে ঢুকছে মাত্রাতিরিক্ত লবণ। যে কারণে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি।
অনুষ্ঠানে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, দেশে প্রতি ৫ জনে ১ জনের উচ্চ রক্তচাপে ভোগার যে তথ্য উঠে এসেছে, এটি খুবই ভয়াবহ। এই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আমাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এই রোগ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, দেশের সকল উপজেলায় এনসিডি কর্নারে আরও ডায়াবেটিসের চিকিৎসক দরকার। সেগুলোতে পরীক্ষা নিরীক্ষা আর ওষুধপত্রসহ সার্বিক সুযোগ সুবিধা আরও বাড়ানো দরকার।
আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ
বিশেষজ্ঞরা জানান, অধিকাংশ সময় উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ এবং উপসর্গ থাকে না। অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপে ভোগা অনেক রোগী জানেই না যে, তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এ জন্য উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সকালের দিকে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত ছন্দ, দৃষ্টিতে পরিবর্তন এবং কানে গুঞ্জন অনুভূতির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অত্যাধিক উচ্চ রক্তচাপ ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, বমি, বিভ্রান্তি, উদ্বেগ, বুকে ব্যথা এবং পেশি কম্পনের কারণ হতে পারে।
রোগ শনাক্ত হলে মিলছে ওষুধ বিনামূল্যে
প্রজ্ঞার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শামীম জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘দেশের ২১ ভাগ জনগোষ্ঠী উচ্চ শব্দ ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে রয়েছে। তা অনেকেই জানে না। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে বিনা মূল্যে ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৮০টি উপজেলায় বিনা মূল্যে এই ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের মধ্যে ২০০ উপজেলায় এবং তার পরের বছরে ৪০০ উপজেলাকে বিনা মূল্যে ওষুধ সেবাদানের আওতায় আনা হবে। এমনকি প্রথম পর্যায়ে উপজেলায় দেয়া হলেও আগামীতে গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ওষুধ সরবরাহ করা হবে।’
ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রামের ম্যানেজার ডা. মাহফুজুর রহমান ভূইয়া, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বিসহ অন্যান্যরা।
সারাবাংলা/এসবি/এএম