রাঙ্গামাটিতে বিজু-সাংগ্রাই বরণে বর্ণিল শোভাযাত্রা
১০ এপ্রিল ২০২২ ১৬:১১
রাঙ্গামাটি: করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর ফের উৎসবে মেতেছে পাহাড়ের মানুষ। আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটিতে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, সাংক্রান, বিষু, বিহু উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে হয়ে গেল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। প্রতিবছর এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে মূলত বৈসাবির (বিজু, সাংগ্রাই ও বৈসুক) আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
মূলত চৈত্রের শেষ দিন ও নববর্ষ বরণকে উপলক্ষ করে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন বছর ধরে চলে আসা এই শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে নিজেদের ঐতিহ্য তুলে ধরেন। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে তাদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন। আনন্দ আমেজে বৈসাবির উপলক্ষ সবার কাছে পৌঁছে দেয় এই শোভাযাত্রা।
রোববার (১০ এপ্রিল) সকালে ‘জুম্ম সংস্কৃতি সংরক্ষণ, বিকাশ এবং অধিকার নিশ্চিত করুন, ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসুন’ স্লোগানে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু সাংক্রান উদযাপন কমিটির উদ্যোগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, ডিসপ্লে প্রদর্শন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনে অংশ নিতে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা জাতিগোষ্ঠী তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে জড়ো হয় পৌর চত্বরে। দলীয় নৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা। দীর্ঘ দুই বছর পর এমন উৎসবে সামিল হতে পেরে উচ্ছ্বসিত তরুণ-তরুণীরা।
প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক হিসেবে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। পরে নৃগোষ্ঠী শিল্পীদের মনোজ্ঞ ডিসপ্লে শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। এসময় অন্যান্য অতিথিসহ বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু সাংক্রান উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক ইন্টুমনি তালুকতার বক্তব্য রাখেন। পরে সকাল সাড়ে ১১টায় রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে গিয়ে শেষ হয়।
আলোচনা সভায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, ভাষা-সংস্কৃতি সরক্ষণে নিজেরা এগিয়ে না এলে কেউ এগুলো এসে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেবে না। তাই আমাদের নিজের এ বিষয়ে আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, সরকার পার্বত্য এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চুক্তি করেছে। উভয় পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে চুক্তির বাকি ধারাগুলো বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে এলে দ্রুত সেগুলোও বাস্তাবয়ন হবে বলে আশা করি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেন, বাংলাদেশ বহু জাতির, বহু সংস্কৃতির দেশ। পার্বত্য এলাকায় বাঙালিসহ ১৪ জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। জুম্ম সংস্কৃতি তথা জীবনধারা সংরক্ষণ করে বিকশিত করতে চাইলে আমাদের আগে অধিকারের কথা ভাবতে হবে। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সংস্কৃতি ধারণ ও লালন করে আরও বিকশিত করব।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন— জুম্ম জাতির জীবন ধারাকে সংরক্ষিত ও নিরাপদ করার জন্য ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সই করেছিলাম। সেই চুক্তি দীর্ঘ ২৫ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। পার্বত্য এলাকার মানুষেরা আসায় আসায় জীবন অতিবাহিত করছে নতুন সূর্যদয়ের অপেক্ষায়। বর্তমানে পার্বত্য এলাকার মানুষ অধিকার হারা হয়ে চাপের মুখে জীবনযাপন করছে।
সারাবাংলা/টিআর