নার্সদের বদলি বাণিজ্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট
১০ এপ্রিল ২০২২ ১৮:০১
ঢাকা: দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের বদলি বাণিজ্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে এই তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বদলি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বদলি বাণিজ্যে লেনদেনকৃত ১০০ কোটি টাকা ফেরতের নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে।
রোববার (১০ এপ্রিল) মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, মোহাম্মদ কাওছার ও মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের এই রিট দায়ের করেন।
রিটে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্ত মো. জামাল উদ্দিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার নার্স কর্মরত রয়েছেন। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পেশাগতভাবে বদলি হওয়া চাকরির একটি স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু সেই পেশাগত বদলি হয়ে উঠেছে নার্স পেশার একটি আতঙ্কের নাম। প্রত্যেক নার্সকে বদলির জন্য গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর এই বদলি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি অধিদফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজন।
গত বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বর এই তিন মাসে প্রায় ৪ হাজার নার্সকে বদলি করা হয়েছে। সেই বদলির মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট প্রায় ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে প্রতীয়মান হয়, বিশেষ একটি সিন্ডিকেট বাংলাদেশের নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি পেশাকে ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। এই নার্স বদলি বাণিজ্যের অন্যতম হোতা কুষ্টিয়ার এক ব্যক্তি। যিনি ওই অধিদফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয়ে গড়ে তুলেছেন এই সিন্ডিকেট।
বদলি বাণিজ্যের বিষয়ে নার্সরা চাকরির ভয়ে কোন ধরনের অভিযোগ তোলার সাহস পায় না। অথচ বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারের পরেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে নার্স পেশা পড়ছে হুমকির মুখে। হাজার হাজার নার্সের নিকট থেকে অবৈধভাবে ঘুষ বাণিজ্য করে নার্সদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। বদলির জন্য নার্সদের টাকা প্রদানে বাধ্য করা এবং তাদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করা নার্সদের মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন। কাজেই যেসব নার্স বদলির জন্য টাকা প্রদান করেছেন উক্ত টাকা ফেরত পাওয়া তাদের আইন সম্মত অধিকার।
এ সব বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
রিট দায়েরের আগে মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইভ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। নোটিশের জবাব না পেয়ে এই রিট দায়ের করা হয়।
বিচারপতি মো. মজিবর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটের ওপর শীঘ্রই শুনানি হতে পারে বলে জানান আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে