জিজ্ঞাসাবাদে সদুত্তর দিতে পারেননি পাম্প অপারেটর সাখাওয়াত
১০ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৪৩
রাজশাহী: গোদাগাড়ীতে দুই সাঁওতাল কৃষকের আত্মহত্যার পর গ্রেফতার গভীর নলকূপের চাকরিচ্যুত অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের অনেক প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। উল্টো দাবি করেছেন, দুই কৃষকের বিষপানের ঘটনা তার গভীর নলকূপের সামনে ঘটেইনি।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দুইটি তদন্ত করছেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহাফুজুল হক। আদালত আসামিকে দুই দিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী গত ৬ ও ৭ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনে।
পুলিশ বলছে, জেরার সময় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থেকে কৃষকদের পানিবণ্টনে অনিয়ম, সিরিয়াল না মানা, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় সাখাওয়াতের কাছে। কিন্তু এসব প্রসঙ্গে কোনো প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি।
আরও পড়ুন-
- বিষপান করা আরেক কৃষকেরও মৃত্যু
- ২ কৃষকের আত্মহত্যা: পাম্প অপারেটর গ্রেফতার
- ২কৃষকের আত্মহত্যা: হয়রানি না দেখে জমি দেখছেন সবাই
- ২ কৃষকের আত্মহত্যা: স্বজনদের সঙ্গে কথা বলল তদন্ত কমিটি
- ২ কৃষকের আত্মহত্যা: পাম্প অপারেটরকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ
- জমিতে পানি দেয়নি পাম্প অপারেটর, ক্ষোভে কৃষকের আত্মহত্যা
- সেচের পানি না পেয়ে ২ কৃষকের আত্মহত্যা: মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি
- পানি না পেয়ে ২ কৃষকের আত্মহত্যা: অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে কমিটি
তদন্ত কর্মকর্তা সাখাওয়াতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কোন কৃষককে পানি কতদিন পর দেওয়া হচ্ছে, তা খাতায় লেখা হয় কি না এবং কৃষকদের সিরিয়াল অনুযায়ীই পানি দেওয়া হয়েছে, তার নিশ্চয়তা কী। জবাবে সাখাওয়াত জানিয়েছেন, খাতায় কিছু লিখিত নেই। সিরিয়াল কীভাবে নিশ্চিত করা হয়, সে বিষয়ে সাখাওয়াত সদুত্তর দিতে পারেননি।
ওসি জানান, ঘটনা তদন্তে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সরেজমিনে এলে বিএমডিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই গভীর নলকূপের আওতায় ২১৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে চাষ হয়েছে ২৬৫ বিঘা। সাখাওয়াত ও বিএমডিএ’র হিসাব কেন মিলছে না— সে প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারেননি চাকরিচ্যুত এই অপারেটর।
তবে জিজ্ঞাসাবাদে সাখাওয়াত দাবি করেছেন, কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি কোথায় বিষ খেয়েছেন তা তিনি জানেন না। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটিকে গোদাগাড়ীতে স্থানীয় এক ভ্যানচালক বলেছেন, গভীর নলকূপের সামনেই বিষপান করেন অভিনাথ। তখন অপারেটর সাখাওয়াতই তাকে ভ্যান নিয়ে যেতে দেখে ডাকেন। এরপর তারা দু’জনে মিলে অভিনাথকে নলকূপের সামনে ভ্যানে তুলে তার বাড়িতে এনে নামিয়ে দেন। আর রবি একাই নলকূপের সামনে থেকে হেঁটে বাড়ি এসেছিলেন বলে তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন তার ভাই সুশীল মারান্ডি।
গত ২৩ মার্চ নিমঘুটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ ও তার চাচাতো ভাই রবি বিষপান করেন। এতে তাদের মৃত্যু হয়। পরিবার দাবি করছে, বোরো ধানের জমিতে পানি না দেওয়ার কারণে তারা দু’জনে বিষপান করেন।
এ নিয়ে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে অপারেটর সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে দু’টি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে দুই দিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। সে অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তাকে।
এদিকে, ঘটনা তদন্তে বিএমডিএ আলাদা একটি কমিটি করেছিল। কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিএমডিএ’র তদন্ত প্রতিবেদনে সাখাওয়াতের নানা অনিয়ম উঠে এসেছে। তাই গ্রেফতারের দিনই সাখাওয়াতকে চাকরিচ্যুত করে বিএমডিএ। নলকূপে পানি নিয়ে হয়রানির কথা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এলেও কেন দুই কৃষক বিষপান করেছেন, সে বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। তাই দুই কৃষকের পরিবারে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর
২ কৃষকের আত্মহত্যা জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ পাম্প অপারেটর সাখাওয়াত সেচের পানি না পেয়ে আত্মহত্যা