‘বিলাসী জীবনের লোভেই’ ধানমন্ডিতে জোড়া খুন
১২ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৩৭
ঢাকা: ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর ধানমন্ডির ১৫নং লোবেলিয়া অ্যাপার্টমেন্টে রাতে গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগম ও তার গৃহকর্মী দিতির লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত আফরোজা বেগমের মেয়ে অ্যাডভোকেট দিলরুবা সুলতানা বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মজিবুর রহমান গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বাচ্চু মিয়া এবং গৃহকর্মী মোছাম্মৎ গুরভী আক্তার নাহিদাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমানের উল্লেখ করেন, বাচ্চু মিয়া ও এ মামলার ভিকটিম আফরোজা বেগম একই গ্রামের বাসিন্দা (ময়মনসিংহের পাগলা থানার মুখী গ্রাম)। আফরোজা বেগম এবং তার স্বামীকে বাচ্চুর বাবা আব্দুল হেকিম অভিবাবক মানতেন। সেই সুবাদে বাচ্চু ওই বাসায় কাজ করে। আব্দুল হেকিম অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার আগে অসুস্থ হলে আফরোজা বেগম তাকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করান। এছাড়া আফরোজা বেগমের গ্রামের জমি দেখাশোনা করতো বাচ্চু মিয়া। এসব কাজ করে সুকৌশলে বাচ্চু তাদের বিশ্বস্ততা অর্জন করে। অর্থ-সম্পদের তথ্যের বিষয়ে অবগত হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে থেকে বাচ্চুর কিছু বখাটে লোকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাদের সঙ্গে সে চলাফেরা করতো। মাদকদ্রব্য সেবন করতো। এ কারণে তার মধ্যে বিলাসী জীবন যাপনের মানসিকতা জন্মে। ফলে আফরোজা বেগমের অর্থ-সম্পদের ওপর বাচ্চুর লোভ জন্মায়। কীভাবে তা লুট করা যায় সুযোগ খুঁজতে থাকে বাচ্চু। ঘটনার কিছুদিন পূর্ব থেকে তার স্বাভাবিক মানসিকতা ও চালচলন পরিবর্তন হয়। ভুল কাজের জন্য তাকে কিছু বললে রুক্ষ আচরণ করতো।
শিল্পপতির বাসায় জোড়া খুন: পলাতক গৃহকর্মী সুরভি গ্রেফতার
বাচ্চুর চালচলন সন্দেহজনক মনে হওয়ায় আফরোজা বেগমের মেয়ে এবং এ মামলার বাদী অ্যাডভোকেট দিলরুবা সুলতানা রুবা তাকে কাজ থেকে বিদায়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাচ্চু সুকৌশলে ভুল স্বীকার করে কাজে থেকে যায়। কিন্তু লোভ বদলায়নি। আফরোজা বেগমের বাসার অর্থ সম্পদের তথ্যের বিষয়ে অবগত ছিলো সে। কীভাবে তা লুট করা যায় সুযোগ খুঁজতে থাকে।
পরিকল্পনা করে করে তার পরিচিত সুরভীর মাধ্যমে একটি চাকু কিনে। তাকে বাসার কাজের লোক সাজিয়ে কৌশলে ও পরিকল্পিতভাবে চাকুসহ বাসায় প্রবেশ করায়। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর বিকেলে আফরোজা বেগমের কাছে চাবি চায় তারা। আফরোজা বেগম চাবি দিতে অস্বীকার করলে রাগে-ক্ষোভে সুরভীসহ বাচ্চু আফরোজা বেগমকে ছুরি দিয়ে কয়েকদফা আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। আফরোজ বেগমকে মারার দৃশ্য দেখে ফেলে গৃহপরিচারিকা দিতি। পরে তারা তাকেও খুন করে।
এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা থেকে তিন জনকে অব্যাহতির আবেদন করেন এই তদন্তকারী কর্মকর্তা।
গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগমের মেয়ে মামলার বাদী অ্যাডভোকেট দিলরুবা সুলতানা রুবা জানান, ‘আসামি বাচ্চু আর সুরভীর অবশ্যই ফাঁসি চাই। টাকার জন্য দুইটা মানুষকে ওরা এমন নির্মমভাবে হত্যা করলো। ওদের ফাঁসিতে ঝোলানো হোক। আব্বা মারা যাওয়ার পর আম্মাই আমার জন্য সবকিছু করেছেন। আম্মাই ছিলেন আমার ভরসাস্থল। সেই আম্মাকে ওরা এমনভাবে খুন করলো। আম্মার স্বাভাবিক মৃত্যু হলে বুঝতাম, আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলেন। কিন্তু কিভাবে আম্মা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো। বাচ্চুকে বিশ্বাস করেছিলাম। বিশ্বাসের মূল্য সে এভাবে দিলো। বিশ্বাসের ফল পেয়েছি, তবে সব হারিয়ে। যিনি চলে গেছেন তিনি তো আর ফিরে আসবেন না। তবে তাকে যারা খুন করেছে তাদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি চাই।’
শিল্পপতির বাসায় জোড়া খুন, নতুন গৃহকর্মীকে সন্দেহ করছে পুলিশ
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর ধানমন্ডির ১৫ নং লোবেলিয়া অ্যাপার্টমেন্টে রাতে গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগম ও তার গৃহকর্মী দিতির লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই জোড়া খুনের ঘটনায় গত ৩ নভেম্বর ধানমন্ডি থানায় আফরোজা বেগমের মেয়ে দিলরুবা সুলতানা মামলাটি দায়ের করেন।
সারাবাংলা/এআই/এমও