ভিসা জটিলতা— ইদের আগে চালু হচ্ছে না বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন
১৪ এপ্রিল ২০২২ ২১:৫২
ঢাকা: ভিসা জটিলতায় আবারও আটকে গেছে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চলাচল। প্রথমে স্বাধীনতা দিবস ও পরে পহেলা বৈশাখে এই ট্রেন চালু কথা বলা হয়েছিল। তবে ভিসা নিয়ে জটিলতার কারণে স্বাধীনতা দিবসের লক্ষ্যমাত্রার পর পহেলা বৈশাখের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে রেলপথে বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ ইদুল ফিতরের পর চালুর চিন্তা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে রেলপথ বিষয়ক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ট্রেন পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রস্তুতি নিলেও ভারতীয় হাইকমিশন ভিসা চালু না করায় ট্রেন চলাচল চালু করা যাচ্ছে না। নতুন করে ট্রেন চালুর দিনক্ষণ এখনো ঠিক করা হয়নি বলে জানান তিনি।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে দুইটি ট্রেন চলাচল করে। ঢাকা-কলকাতা রুটে চলে মৈত্রী এক্সপ্রেস, খুলনা-কলকাতা রুটে চলে বন্ধন এক্সপ্রেস। এছাড়া ঢাকা-শিলিগুড়ি রুটে মিতালী এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করা হলেও এখনো ট্রেনটি যাত্রী পরিবহন শুরু করতে পারেনি।
দুই দেশের মধ্যে চালু থাকা দুইটি ট্রেনের মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস যাত্রা শুরু করে ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি উদ্বোধন করেছিলেন সেই যাত্রার। এর মাধ্যমে ৪৩ বছর পর দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগের সূচনা হয়েছিল। এই ট্রেনটি সপ্তাহে পাঁচ দিন চলাচল করত।
অন্যদিকে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর খুলনা-কলকাতা রুটে শুরু হয় বন্ধন এক্সপ্রেসের যাত্রা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ট্রেন সেবার উদ্বোধন করেন। প্রাথমিকভাবে একদিন করে চালু হলেও পরে বাড়ানো হয় আপ-ডাউন ট্রিপ।
কয়েক বছর চললেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালে মার্চ থেকে দুই দেশের মধ্যে চলাচল করা ট্রেনগুলো বন্ধ রয়েছে। এরপর দুই দেশের মধ্যে স্থলপথ ও আকাশপথে যোগাযোগ শুরু হলেও ট্রেন যোগাযোগ আর শুরু করা যায়নি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এ বছরের শুরু থেকেই দুই দেশের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ শুরুর চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে ট্রেন চলাচল ফের শুরুর লক্ষ্য নেওয়া হয়। সেদিন সম্ভব না হলে পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় আসন্ন পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষের নতুন দিন।
এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের টার্গেট ছিল— ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মৈত্রী ও বন্ধন ট্রেন চালু করব। সেজন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও করা হলো। কিন্তু ভিসা প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় ট্রেন চলাচল শুরু করা যায়নি। পরে আমরা চিন্তা করলাম পহেলা বৈশাখে চালু করার কথা। কিন্তু ভারতীয় দূতাবাস ভিসা চালু করলেও তাতে বাস কিংবা ট্রেনের কথা বলা হয়নি। এসব জটিলতার কারণে পহেলা বৈশাখেও ট্রেন চালু করা যাচ্ছে না। এখন আমরা রমজানের পর ট্রেন চালুর চিন্তা করছি।
মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেসের যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকাকালীনই ২০২১ সালের ২৭ মার্চ উদ্বোধন করা হয় মিতালী এক্সপ্রেস। ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে গিয়ে ভারতের শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে গিয়ে থামার কথা এই ট্রেনের। তবে দুই দেশের মধ্যেকার তৃতীয় ট্রেননি উদ্বোধন করা হলেও এখনো যাত্রী পরিবহন শুরুই করতে পারেনি।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আমরা আশা করছি একই সময়ে (রমজানের পর) মিতালীও যাত্রী পরিবহন শুরু করতে পারবে। মিতালীর প্রথম যাত্রায় আমিও যাত্রী হয়ে নিউজলপাইগুড়ি যাব।
মন্ত্রী বলেন, ট্রেনগুলো চালু করার জন্য আমরা আমাদের প্রস্তুতি জানিয়ে চিঠি দিয়েছি ভারত রেলওয়েকে। আমাদের দিক থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এখন তাদের পক্ষ থেকে সাড়া মিললেই ট্রেনগুলো যাত্রী পরিবহন শুরু করতে পারবে।
টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় অবশ্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই জানাচ্ছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, ব্যবসা ও চিকিৎসাসহ ভ্রমণের জন্যও বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। মৈত্রী ও বন্ধনের মাধ্যমে রেলপথ তাদের জন্য সহজ ও নিরাপদ ভ্রমণের মাধ্যম হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। ফলে তারা দ্রুত জটিলতা কাটিয়ে দুই দেশের ট্রেন চলাচল শুরুর দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর
বন্ধন এক্সপ্রেস বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ মিতালী এক্সপ্রেস মৈত্রী এক্সপ্রেস