Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্যাস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চান পোশাক কারখানার মালিকরা

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১২ এপ্রিল ২০২২ ২১:৪৯

ঢাকা: শিল্প কারখানায় দিনে চার ঘণ্টার জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেট্রোবাংলা। তবে এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারছেন না তৈরি পোশাক খাতের কারখানাগুলোর মালিকরা। তারা বলছেন, ইদের ঠিক আগে এসে এমন সিদ্ধান্ত পণ্য উৎপাদনকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করবে। এ সিদ্ধান্তকে ‘যৌক্তিক নয়’ অভিহিত করে তারা সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। না হলে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না বলেও জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১১ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে শিল্প কারখানায় দিনে চার ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার কথা জানায় পেট্রোবাংলা। বিজ্ঞপ্তিতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রতিদিন মোট চার ঘণ্টা সব শিল্প শ্রেণির গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। জানানো হয়, মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

একে ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ অভিহিত করে বিজিএমইএ’র সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম সারাবাংলাকে বলেন, এই সিদ্ধান্ত মানার মতো নয়। একেবারেই ভুল সিদ্ধান্ত। গ্যাস বন্ধ থাকলে সাপ্লাইন চেইনে বিশাল সমস্যা হবে। ইদের আগে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে পেট্রোবাংলা ভুল করেছে। গ্যাস বন্ধ থাকলে শিপমেন্ট বিলম্বিত হবে। রফতানিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। পোশাক খাতের পুরো সাপ্লাই চেইনই ভেঙে যাবে।

আরও পড়ুন- সিএনজির পর এবার সরবরাহ বন্ধ থাকবে শিল্প কারখানায়

তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার জন্য আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। বলেছি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা যদি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করে তাহলে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়া ছাড়া পথ থাকবে না।

পেট্রোবাংলা চার ঘণ্টা গ্যাস বন্ধ রাখার কথা বললেও এর প্রভাব আরও বেশি সময় ধরে পোশাক কারখানাগুলোকে বহন করতে হবে বলে জানাচ্ছেন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, ডায়িংয়ের কাজ তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা চলে। একেকটি ব্যাচ উঠতে সময় লাগে ৮ ঘণ্টা। এখন চার ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকলে প্রকারান্তরে একটি ব্যাচই বন্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে। আবার সকালে শুরু হওয়া শিফট শেষ হয় দুপুর ১টার দিকে। এরপর ৪টা পর্যন্ত কিন্তু আর ব্যাচে ডায়িং করা যাবে না। এভাবে প্রতিদিন আট থেকে ১০ ঘণ্টা উৎপাদন বন্ধ থাকবে।

বিজ্ঞাপন

এই সিদ্ধান্তের ফলে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ছাড়াও শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না মোহাম্মদ হাতেম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ইদের আগে বেতন-বোনাস দেওয়ার জন্য আমরা যখন বেশি করে কাজ করাই, তখন এমন সিদ্ধান্ত বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কারণ উৎপাদন বেশি হলে, রফতানির পরিমাণ বেশি হলে আমরা সেই অর্থ দিয়ে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করি। যদি উৎপাদনই বন্ধ থাকে, তাহলে টাকা আসবে কোথা থেকে। এর জের ধরে কারখানায় শ্রমিকদের অসন্তোষ দেখা দেওয়া শঙ্কাও রয়েছে। এমনিতেই গত মাস দেড়েক গ্যাসের চাপ কম ছিল। গত কিছুদিনে পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে আসায় আমরা বায়ারদের কাছ থেকে প্রচুর কাজ নিয়েছি। এখন কম উৎপাদনের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে শিপমেন্ট করতে না পারলে বহুমুখী জটিলতা তৈরি হবে। এর কারণে বায়ারদের আস্থা হারালে দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাতটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরকম একটি সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।

বিজিএমইএ’র সহসভাপতির মতো এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কথা বলছেন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতিও। তিনি বলেন, রফতানিমুখী শিল্পে গ্যাস বন্ধ না রেখে আমদানি করা যায়— এমন পণ্যের শিল্প কারখানায় গ্যাস বন্ধ রাখা যেতে পারে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আবারও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকষর্ণ করব। একইসঙ্গে আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিও আকর্ষণ করব।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, এই সময়ে গ্যাস বন্ধ থাকলে পোশাক কারখানায় উৎপাদন চরমভাবে বিপদগ্রস্ত হবে। আমরা এই সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার জন্যে শিগগিরই কথা বলব। গ্যাস বন্ধের এই সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করার জন্য আমরা প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

গ্যাস সরবরাহ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ তৈরি পোশাক খাত পোশাক খাত শিল্প কারখানা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর