ঘুম হারাম করে দেব— দখলদারদের উদ্দেশে মেয়র আতিক
১৬ এপ্রিল ২০২২ ১৯:৪৩
ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় অবৈধভাবে খাল, মাঠ, পার্ক ইত্যাদি দখলের ফলে নগরবাসীর জীবন অতিষ্ঠ। একদল দখলকারী জনগণের সম্পত্তি খাল দখল করে আবাসন গড়ে তুলেছেন। তাদের উদ্দেশে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে দখলকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করব। তাদের ঘুম হারাম করে দেব।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর শ্যামলীর শ্যামলী পার্কে উন্নয়নকৃত ‘সাতটি পার্ক ও মাঠ এর শুভ উদ্বোধন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এ সব কথা বলেন মো. আতিকুল ইসলাম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ‘উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন উন্নয়ন ও সবুজায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে।
এ সময় মেয়র নগরবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা আমাকে বলুন কোথায় দখলকৃত মাঠ ও খাল আছে আমি আপনাদের নিয়ে সেই মাঠ ও খাল উদ্ধার করতে চাই। যারা তথ্য জানাবেন তাদের নাম গোপন থাকবে। আপনাদের সঙ্গে নিয়ে দখলকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করব। তাদের ঘুম হারাম করে দেব। কারণ তাদের কারণে আপনারা ঠিকমত ঘুমাতে পারছেন না।’
আবাসন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নকশা অনুমোদনের সময় সেখানে মাঠ, পার্ক, বাজার, কবরস্থান, শ্মশান সবই রাখেন কিন্তু জমির দাম বাড়লে সেগুলোও বিক্রি করে দেন। যেই কথা বলতে যাই তখন মামলা দিয়ে দেন।’
দখলদারদের দখলে থাকা খাল প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘খাল জনগণের সম্পত্তি। একে কেউ দখল করতে পারবে না। কিছু কিছু জায়গায় খালের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তার দিকে পেছন ফিরে বাড়ি করা। পানি চলাচল ঠিক থাকলে পানিতে মশা জন্ম নেয় না। কিন্তু দেখা যায় খাল দখল করে ৬০ ফিটের জায়গায় ৬ ফিট করে দেওয়া হয়েছে। এখানে পানি চলাচল করতে পারে না, ফলে মশা জন্ম নেয়। সেই খাল উদ্ধার করে নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, ‘নগরবাসীর জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় নববর্ষের উপহার হিসেবে সাতটি পার্ক ও মাঠ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো। এগুলো আপনাদেরই পার্ক। আপনাদেরই এই পার্ক ও মাঠগুলোকে দেখে রাখতে হবে। মাঠগুলোকে আপনারা সন্তানের মতো ভালোবাসবেন এটা আমার অনুরোধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদেরকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খেলার মাঠ, পার্ক, খাল এগুলো উদ্ধার করে দিতেই হবে। তাদের প্রতি এটি আমাদের দায়িত্ব। এগুলো না দিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রশ্ন করবে আপনারা আমাদের কী দিয়েছেন। মহানগর জরিপ অনুযায়ী ৬০ (ষাট) ফিট খালকে ৬ (ছয়) ফিট বানিয়ে খালের সীমানা নির্ধারণ করে দখল করা যাবে না। সি এস এবং আর এস অনুযায়ী যেটি বেশি সেই অনুযায়ী খালের সীমানা নির্ধারণ করা হবে।’
নগরবাসীর উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘আজ নববর্ষের উপহার হিসেবে যে সাতটি পার্ক ও মাঠ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো এগুলো আপনাদেরই দেখে রাখতে হবে। এগুলো আপনাদেরই সম্পদ। এখানে সবুজায়ন করে দেওয়া হয়েছে, মাঠ করে দেওয়া হয়েছে এবং খেলার সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।’
এ সময় তিনি ডিএনসিসির কর্মকর্তাদের আগামী সাত দিনের মধ্যে এই পার্ক ও মাঠ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যাবস্থাপনা কমিটি করার নির্দেশনা প্রদান করেন।
বক্তৃতা শেষ করে মেয়র সাতটি পার্ক ও খেলার মাঠের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সাতটি পার্ক ও খেলার মাঠ হলো: শ্যামলী পার্ক, ইকবাল রোড পার্ক, হুমায়ুন রোড পার্ক, বনানী ব্লক-সি পার্ক, বারিধারা পার্ক, বনানী ব্লক-এফ পার্ক, রায়ের বাজার বৈশাখী খেলার মাঠ।
উদ্বোধন শেষে মেয়র অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে শ্যামলী পার্কে বৃক্ষরোপণ করেন এবং পুরো পার্কটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে পার্কের বিভিন্ন স্থাপনা ও খেলার সরঞ্জামগুলো ঘুরে দেখেন এবং শিশুদের সাথে কথা বলেন ও আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ১৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. সাদেক খান। সাতটি পার্ক ও মাঠের উন্নয়ন কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য ডিএনসিসি মেয়রকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য এই পার্ক ও মাঠগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক সুবিধা সংবলিত পার্ক ও মাঠগুলো পেয়ে আমরা সত্যি আনন্দিত। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা সবসময় ডিএনসিসির পাশে আছি।’
৩২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনারেল মুহা. আমিরুল ইসলাম, প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি স্থপতি ইকবাল হাবিব, ডিএনসিসির কাউন্সিলরবৃন্দ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
উল্লেখ্য, এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাদের চাহিদার ভিত্তিতেই বহুমুখী উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই মাঠগুলোর নকশা করা হয়েছে। নকশা প্রণয়নের সময় শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সকল বয়সের মানুষ এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষসহ সবার সুবিধার কথা বিবেচনা করা হয়েছে। মাঠে রয়েছে শিশুদের ও বড়দের আলাদা খেলার জায়গা, নারীদের বসার সুব্যবস্থা, বসে খেলা উপভোগ করার জন্য রয়েছে গ্যালারি। মাঠে রয়েছে পানি না জমার ব্যবস্থা। ক্রিকেট ও ফুটবল দুটি খেলার সু-ব্যবস্থা।
সারাবাংলা/আরএফ/একে