মেট্রোরেলের উদ্বোধন ডিসেম্বরে, এখনো চূড়ান্ত হয়নি ভাড়া
২০ এপ্রিল ২০২২ ১০:০৫
ঢাকা: বহুল কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল উদ্বোধনের আর মাত্র সাড়ে আট মাস বাকি। সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষপর্যায়ে। সবকিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বরেই উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। কিন্তু এখনো যাত্রীদের ভাড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের আগেই ভাড়া চূড়ান্ত করা হবে। মেট্রোরেলের ভাড়া কেমন হতে পারে, তার একটি নমুনা তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সেখানে মেট্রোরেলের সর্বনিম্ম ভাড়া ২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা হতে পারে বলে জানানো হয়।
মেট্রোরেল আইন ২০১৫ অনুযায়ী, ভাড়া নির্ধারণ করতে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।
ওই আইনে বলা হয়, মেট্রোরেলের পরিচালন ব্যয় ও জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে ভাড়ার সর্বনিম্ম ও সর্বোচ্চ হার সুপারিশ করবে এ কমিটি। এজন্য ভাড়ার সুপারিশের ক্ষেত্রে রুট ও আরোহন স্থানের দূরত্ব, প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয় এবং অন্যান্য গণপরিবহনের ভাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষার বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। আইন অনুযায়ী সেই কমিটি গঠন করা হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর।
জানা গেছে, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে গঠন করা সাত সদস্যের ওই কমিটি এখন পর্যন্ত মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করতে মাত্র দুইটি সভা করেছে। প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি। আর দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয় তার এক মাস পর ফেব্রুয়ারিতে। ওইসব বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত আসে, ভাড়ার বিষয়ে ডিএমটিসিএলের কাছে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চাওয়া হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব চায়। যা কমিটির কাছে পাঠাতে ডিএমটিসিএলের সময় লাগে পুরো এক বছর। যার নমুনা সম্প্রতি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেছে।
যে নমুনা ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে উত্তরা থেকে মতিঝিলের ভাড়া হতে পারে ১০০ টাকা, আর সর্বনিম্ম ভাড়া হবে ২০ টাকা। এ বিষয়ে ঢাকা পরিবহন কর্তৃপক্ষে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএমটিসিএল এর প্রস্তাব এখনো কমিটি গ্রহণ করেনি।
এ প্রসঙ্গে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতারের সঙ্গে একাধিকসবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির এক সদস্য জানান, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। তাই সে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। এখন নতুন করে প্রস্তাব পাঠালে কাজ শুরু করা হবে। তবে যেহেতু ডিসেম্বরে মেট্রোর একটি পার্ট ওপেন হচ্ছে, সেহেতু তার আগেই সব কিছু চূড়ান্ত করা হবে। বিষয়টি নিয়ে ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারাও জানিয়েছেন, এ বিষয়ে কাজ করছেন তারা।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট- ডিটিএমসিএল। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেলপথে ৯টি স্টেশন নির্মাণ হবে। ৯টি স্টেশনের মধ্যে ৮টির রুপশেডের কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন প্রতিটি স্টেশনে চলছে বৈদ্যুতিক ও মেকানিকের কাজ। স্টেশনগুলোর অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজও পুরোপুরি শেষ। এখন চলছে স্টেশনের ভেতরের কাজ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই অংশের ৯১ দশমিক ৪১ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে শেষ। এদিকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করতে গত আগস্ট মাসে মেট্রোরেলের পারফরম্যান্স টেস্ট (পরীক্ষামূলক চলাচল) শুরু হয়েছে। শুরুর পর থেকে টানা ৬ মাস এই পারফরম্যান্স টেস্ট চলেছে। এরপরের তিন মাস চলবে সমন্বিত পরীক্ষামূলক (ইন্টিগৈডেট টেস্ট) চলাচল। যা এখন চলছে। তার পরের পাঁচ মাসে ট্রায়াল রান (চূড়ান্ত পরীক্ষামূলক চলাচল) শেষ করা হবে। এরপর আসছে ডিসেম্বরে যাত্রী পরিবহনে চলাচলের জন্য পুরাপুরি প্রস্তুত থাকবে মেট্রোরেল।
প্রকল্পের অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল বা এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ কাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৭৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। জানা গেছে, দ্বিতীয় অংশেও ভায়াডাক্ট বসানো হয়েছে দুই মাস আগে। দুই অংশ মিলিয়ে রেলপথ ১৬ কিলোমিটার। যার মধ্যে ৪০ ভাগ কাজ শেষ।
সারাবাংলা/জেআর/এএম
সারাবাংলা/এএম