‘আ.লীগের অপরাধটা কী যে তাদের হটাতে হবে?’
২০ এপ্রিল ২০২২ ১৭:২৮
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশের কিছু নেতা আছেন, যারা দুঃসময়ে মানুষের পাশে কতটুকু দাঁড়িয়েছে সেটা জানি না। করোনার সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন কি না, সেটা দেখি নাই। কিন্তু এই সরকারকে হটাতে তারা খুব আন্দোলনে ব্যস্ত। আমার প্রশ্ন তাদের কাছে, আওয়ামী লীগ সরকার অপরাধটা কী করেছে?
বুধবার (২০ এপ্রিল) বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়ন প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ড. কামাল হোসেন ও মান্না সাহেবদের একটা গ্রুপ। আবার তাদের সঙ্গে যুক্ত কমিউনিস্ট পার্টি এবং বাম দল। তারা সবাই নাকি এক হয়ে, আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে হঠাবে।’
অপরাধটা কী আওয়ামী লীগের?- এমন প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে সরকারে আসি। সেই নির্বাচনে ইশতেহারে আমরা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা আমাদের লক্ষ্যে স্থির ছিলাম ২০২১ সাল পর্যন্ত। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। তারা বার বার আমাদের ভোট দিয়েছে। ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকারে এসেছি। আমরা আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার অনুসারে লক্ষ্য অর্জন করেছি।’
মুজিববর্ষ উদযাপনকালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই সময় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। আমার প্রশ্ন এটা কি তাদের ভালো লাগেনি? এজন্য কি তারা এই সরকারকে হটাতে চায়? বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করেছি, সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পেরেছি।’
‘আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের বিনামূলে ঘর ও জমি দিচ্ছি। ১ম বার সরকারে আসার পর আর্থিক অস্বচ্ছলতা ছিল। আমরা ব্যারাক হাউজ নির্মাণ করে দিয়েছি। দ্বিতীয়বার সরকার এসে আমরা আলাদা করে সেমিপাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। যার কোনো জমি নাই, ঘর নাই, কিছু নাই। একটি ঘর পাওয়ার পর সে জীবন-জীবিকার পথ সে খুঁজে পাচ্ছে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে। এটা কি আওয়ামী লীগের অপরাধ? এ জন্যই কি এই সরকার হটাতে হবে?’- প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের টানা মেয়াদে জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। যেটা নিয়ে একটা বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের ছিল। এবং এই একটা সিদ্ধান্তই সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে। জাতির পিতা ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন যে, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই।’
ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতির ফলে বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ার নানা দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে অনেক মানুষ এই ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে ঘরে বসে বিদেশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। আর্থিক স্বচ্ছলতা পাচ্ছে।’
পায়রায় তেরশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘অন্তত আট মাস আগেই এটার কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হওয়ায় আমরা প্রায় দেড়শ মিলিয়ন ইউএস ডলার সাশ্রয় করেছি। অনেকেই প্রশ্ন করেন, এত টাকার এত বড় বড় প্রজেক্টের প্রয়োজন কি? শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে গেলে তো আমাদের তৈরি করতেই হবে। আমরা সেখানে যে প্রায় নয়শ’ কোটি টাকার মতো বাঁচাতে পারলাম- এই কথাটা কেউ বলেন না। এটা বলতে বোধ হয় তাদের একটু কষ্টই হয়!’
কৃষি জমি রক্ষার লক্ষ্যে সারাদেশে ১০০টা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা সমগ্র বাংলাদেশে তৈরি করে দিচ্ছি। কারণ একেক অঞ্চলে আমাদের একেক পণ্য উৎপাদন হয়। সেগুলো যেন কাঁচা পণ্য হিসেবে প্রক্রিয়াজাত হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। এবং সেখানে অনেক বড় দেশ বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসছে।’
গ্রামীণ অর্থনীতির অগ্রগতি জোরদার করার লক্ষ্যে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদেশের প্রতিটি মানুষের যাতে ভাগ্য পরিবর্তন হয় তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। করোনাকালীন সময়ও দারিদ্যের হার হ্রাস পেয়েছে। এরকম বহু কাজ আমরা করে যাচ্ছি। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে- এই যে, কাজগুলো করে যাচ্ছি, এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। তৃণমূলের মানুষ, গ্রামের মানুষ উপকার পাচ্ছে। তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যটা কী? এই মানুষগুলোকে এই সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া- এটাই তাদের লক্ষ্য, এটাই তাদের উদ্দেশ্যে!’
আধুনিক প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোল মডেল, তখন আমাদের দেশের কিছু মানুষ বিদেশের কাছে নানা অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ব্যস্ত। এরা সরকার উৎখাত করতে ব্যস্ত। খুব ভাল কথা, তাদের কর্মসূচি জনগণের কাছে তুলে ধরুক। তারা দেশের মানুষের জন্য কী করবে। আমরা দেশের মানুষের জন্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে উঠবে সেজন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তার ভিত্তিতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
কৃষক লীগের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আপনাদের যখনই যে কাজ করতে বলেছি আপনারা তা করেছেন। আগামীতেও কৃষকের পাশে আপনারা থাকবেন। কৃষকের পাশে থেকে তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে তাদের জন্য কাজ করবেন। নতুন নতুন দাবি তোলা লাগবে না। এদেশের কৃষকের কীসে মঙ্গল সেটা আমরা ভালোভাবেই জানি। এবং সেটাও আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলার কৃষকই আমাদের প্রাণশক্তি। মনে রাখতে হবে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে কৃষক ফসল উৎপাদন করে, সেটা খেয়েই কিন্তু সবার জীবন বাঁচে। কাজেই সেই কৃষকরা আমাদের কাছে অনেক সম্মানের। তাদের সম্মান করতে শিখিয়েছেন আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
আসন্ন ধান কাটার মৌসুমে করোনাকালীন সময়ের মতো আবারও কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
কৃষকদের জন্য নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শতভাগ বিদ্যুতের সুফল কৃষকরা পাচ্ছে। কৃষক শুধু ফসল উৎপাদন করবে না, তার ন্যায্য মূল্যটাও যাতে পায় তার ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। কৃষকদের সবধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি।’ করোনাকালীন সময়ে সহযোগী সংগঠনগুলোর কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। সংগঠনের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে মির্জা আব্দুল জলিল, মিজানুর রহমান মানু, হারুনুর রশিদ হাওলাদার, মোতাহার হোসেন মোল্লা বক্তৃতা করেন। সভা পরিচালনা করেন কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম