ইদে আকাশপথেও যাত্রীর চাপ, শেষ সব টিকিট
২৪ এপ্রিল ২০২২ ২৩:২৯
ঢাকা: ইদ এলেই রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে মানুষ। আর তাই সড়ক ও নৌপথে থাকে মানুষের চাপ। এবার সেই চাপ বেড়েছে আকাশ পথেও। ইদে ঘরে ফিরতে বাস, ট্রেন ও লঞ্চের সঙ্গে আকাশপথে বিমানের যাত্রীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। এমনকি যাত্রীর চাপের কারণে অধিকাংশ বিমানের টিকিটও বিক্রি শেষ। বলতে গেলে বর্তমানে আকাশপথের টিকিটের জন্য যাত্রীদের হাহাকার লেগে গেছে।
রোববার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ বিমান, বেসরকারি ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স এবং নভোএয়ারের সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা যায়। এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, আকাশপথে ২৮, ২৯ ও ৩০ এপ্রিলের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ইতোমধ্যে এসব তারিখের টিকিট প্রায় শেষ।
এদিকে, এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বিমানের টিকিটের দাম বেড়েছে। তবে বর্তমানে যাত্রীদের বিজনেস ক্লাসের টিকিট কিনতে হচ্ছে। কেননা অনেকে আগেই ইকোনমি ক্লাসের টিকিট কেটে রেখেছে। তাই বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিজনেস ক্লাসের টিকিট যাত্রীদের কিনতে হচ্ছে।
অপরদিকে, দীর্ঘ ২ বছর পর অভ্যন্তরীণ আকাশপথে করোনার বিধিনিষেধ উঠে গেঠে। এর আগের বছরেও ইদের সময় করোনার হানা ছিল। তখন যাত্রী পরিবহনেও আকাশ পথে নানা বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু এবার আকাশ পথে কোন বিধিনিষেধ নেই। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আকাশ পথে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে।
ইদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ ২ অথবা ৩ মে। সেই হিসেবে যারা বিমানের টিকিট কাটতে আসছেন বেশির ভাগই ২৮, ২৯ ও ৩০ এপ্রিলের টিকিট খুঁজছেন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টিকিট কাটতে এসে অনেককেই টিকিট না পেয়ে ফিরে যেতেও দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার বিমানের টিকিটের ভাড়া বেশি রাখা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন। এবার যশোর, সৈয়দপুর, বরিশাল ও রাজশাহী রুটের টিকিট সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্বাভাবিক সময়ে অভ্যন্তরীণ রুটে বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ার ঢাকা থেকে প্রতিদিন যশোরে ছয়টি, রাজশাহীতে তিনটি, সৈয়দপুরে ছয়টি, বরিশালে দুটি করে ফ্লাইট অপারেশন করে। আর ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ঢাকা থেকে প্রতিদিন বরিশালে দুটি, রাজশাহীতে দুটি, যশোরে সাতটি এবং সৈয়দপুরে ছয়টি ফ্লাইট রয়েছে। কিন্তু এয়ারলাইন্স দু’টি ইদের আগের চার দিনের জন্য প্রতিদিন ১৬টি করে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার আবেদন জানিয়েছে সিভিল এভিয়েশনের কাছে।
এ বিষয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জিএম (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘২৮ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত আকাশ পথে যাত্রীদের বেশি চাপ দেখা যাচ্ছে। ইদের পরে কক্সবাজার বেশি চাপ থাকবে। এছাড়া সৈয়দপুর, বরিশাল, যশোর ও রাজশাহী রুটের টিকিট বেশি এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। গত ২/৩ বছরের তুলনায় এ বছর যাত্রীর চাপ বেশি দেখা যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে নভোএয়ারের এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) মফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘তেলের দাম বেড়েছে। তাই আমাদের ভাড়া বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। যার কারণে ভাড়া একটু বেশি। এছাড়া যাত্রী চাহিদা বাড়লে টিকিটের স্বল্পতা থাকে। সে সময় ইকোনমি ক্লাসের আসন থাকে না। ফলে যাত্রীদের বাধ্য হয়ে বিজনেস ক্লাসের আসনের টিকিট কিনতে হয়। যার কারণে দাম বেশি পড়ে।’
যদিও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইদ হোক আর অন্য সময় হোক বিমানের টিকিটের দাম বাড়ানো ঠিক না। এতে যাত্রীদের ওপর বেশি প্রভাব পড়ে। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও টিকিটের দাম স্বাভাবিক রাখতে পারে এয়ারলাইন্সগুলো। ইদে অনেকেই ভোগান্তি কমাতে বিমানে যাতায়াত করে থাকেন। টিকিটের দাম বাড়লে তারা হয়তো আর বিমানে যাবে না। এটাও কিন্তু খারাপ দিক বিমানের জন্য। কেননা তারা যাত্রী হারাচ্ছে।’
টিকিটের দামের বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমানের টিকিটের দাম সহনশীল রাখতে আমি সবার কাছে অনুরোধ জানাব। আমরা ইতোমধ্যে সবার সঙ্গে বসেছি, কথা বলেছি বিষয়টি নিয়ে। আশা করি সমস্যা হবে না। এছাড়া চাহিদা বেশি- এই সুযোগে কেউ যাতে বেশি দাম নিতে না পারে সেই বিষয়টি আমরা মনিটরিং করছি।’
সারাবাংলা/এসজে/পিটিএম